মধ্যযুগীয় ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সময়গুলোর একটি ছিল ব্ল্যাক ডেথ মহামারী, যা মাত্র পাঁচ বছরে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তবে এখানেই থেমে থাকেনি প্লেগ রোগ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্রাণঘাতী এই ব্যাকটেরিয়া (ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস) এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছিল যে এটি তার আক্রান্তদের দীর্ঘ সময় বাঁচিয়ে রাখতে পারতো—ফলে আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হতো।
নতুন এক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, প্লেগ ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট জিন pla-এর পরিবর্তনের ফলে এর সংক্রামকতা কমে গিয়েছিল এবং মানুষ বেশি দিন বেঁচে থাকায় রোগটি আরও বিস্তৃত হতে পেরেছিল। গবেষণাটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ডিএনএ গবেষণা কেন্দ্রের ডক্টরাল শিক্ষার্থী এবং গবেষণার সহ-লেখক রাভনিত সিধু জানান, ‘pla জিন একটি এনজাইম তৈরি করে যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া দেহের লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়ে।’
গবেষণায় দেখা যায়, প্রাচীন ডেনমার্ক, ইউরোপ ও রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা প্লেগে আক্রান্ত মানুষের কঙ্কাল থেকে প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেইনে pla জিনের কপি কম ছিল। গবেষণাগারে এই দুর্বল pla যুক্ত স্ট্রেইন ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখা যায়, আক্রান্তদের মৃত্যুহার ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম ছিল এবং মৃত্যুর সময়সীমা গড়ে দুই দিন দেরিতে হতো।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের প্লেগ মহামারী মোকাবিলায় নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও রোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ডেবোরাহ অ্যান্ডারসন জানান, ‘আমাদের গবেষণাগারে ফ্লি-রডেন্ট চক্র এবং প্লেগের বিস্তার নিয়ে কাজ হচ্ছে। এই গবেষণাপত্র পড়ার পর আমরা Pla জিনের কার্যকারিতা নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে নজর রাখব।’
বর্তমানে প্লেগ এখনও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে আফ্রিকার কয়েকটি অংশে, বছরে কয়েকবার দেখা যায়। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব, জানিয়েছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।
প্লেগ ইতিহাসে তিনটি বড় মহামারী ঘটিয়েছে—প্রথমটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে, দ্বিতীয়টি ১৩৪৭-১৩৫২ সালে ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত এবং তৃতীয়টি ১৮৫০-এর দশকে চীনে শুরু হয়ে ১৮৯৪ সালে এক মহামারীতে রূপ নেয়। গবেষকরা মনে করেন, আজকের প্লেগ সংক্রমণগুলো এই তৃতীয় মহামারীর অংশ।
গবেষণাটি পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন জেনিফার ক্লাঙ্ক নামের এক বিজ্ঞানী, যিনি মিশিগানের একটি বায়োটেক কোম্পানি Daciel Arbor Biosciences-এর সঙ্গে যুক্ত। যদিও গবেষণায় কোনো আর্থিক স্বার্থ জড়িত ছিল না বলে জানানো হয়েছে।