সর্বশেষ
লন্ডন বৈঠকে কী হতে যাচ্ছে?
উড্ডয়নের পর পরই আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি
জীবন বলে দেবে কোনটা করা বেশি জরুরি: অপি করিম
বাংলাদেশকে পেনাল্টি না দেওয়া রেফারি ও তার স্ত্রীর ‘ফেসবুক লক’
প্রযোজনায় বাজেট ও কনটেন্টের ভারসাম্য তৈরি করা কঠিন: সকাল
নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে হবে: রুহিন হোসেন প্রিন্স
ভারতে ২৪২ জন যাত্রী নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত
লস অ্যাঞ্জেলেসে ইরাক-সিরিয়ার চেয়েও বেশি সেনা মোতায়েন
বিবাহিত নাগার্জুনের জন্য ১০ বছর অপেক্ষায় ছিলেন টাবু
ভুটানে সাবিনা-সুমাইয়ার হ্যাটট্রিক বিধ্বস্ত প্রতিপক্ষ
কালো জাদুর প্রভাব ও পরিত্রাণের উপায়
ব্রিটেনে পাচার হওয়া অর্থের খোঁজে ড. ইউনূস
ফোন নাম্বার ছাড়াই অডিও-ভিডিও কলের সুবিধা দেবে ‘এক্সচ্যাট’
দিল্লি থেকে ফেরত পাঠানো হলো বাংলাদেশি দাবাড়ুকে, বিপাকে রাণী হামিদ!
খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার ৫ স্বাস্থ্য উপকারিতা

হাসপাতালে নেওয়ার আগে ফেসবুকে কোন অভিমানের কথা লিখেছিলেন তানিন সুবহা

অনলাইন ডেস্ক

মাসখানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি পরিবারের জন্যই বাঁচতে চাই।’ সেই চিত্রনায়িকা তানিন সুবহা গতকাল মারা গেছেন। এক যুগের বেশি সময় আগে গ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসেন তানিন। চেয়েছিলেন গান দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে। কিন্তু বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়। পরে ঘটনাক্রম তিনি হয়ে ওঠেন নাটক থেকে সিনেমার অভিনেত্রী। কীভাবে তিনি মিডিয়ায় পা রেখেছিলেন, কে এই নায়িকা তানিন সুবহা?

তানিনের শৈশব কেটেছে পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরবে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে দেশে আসেন। চলে যান নানা বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। সেখানেই পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা। দেখতে সুন্দরী হওয়ায় বন্ধুরা নায়িকা বলে ডাকতেন। গান ভালো গাইতেন বলে কেউ ডাকতেন গায়িকা বলে। পরিচিত মহলে নায়িকা ও গায়িকা হিসেবে পরিচিতি ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে মুনমুন নামের এক বান্ধবীর উৎসাহেই তানিন গানের একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে নাম লেখান। কিন্তু পরিবারের লোকেরা বলতেন, শুধুই পড়াশোনা করতে। তানিন চাইতেন, পড়াশোনার পাশাপাশি গান করতে। তানিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মিডিয়ার প্রতি ভালো লাগার পর থেকে কীভাবে কী করব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। একটা মেয়ের জন্য এটা অনেক কঠিন। সেই সময় আমার ভাগ্য সহায় হয়ে আসে প্রথম সুযোগ। ২০১২ সালে ক্লোজআপে অংশ নিই। আমার ৭ মাসের একটি মেয়ে ছিল। তাকে রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। ভাগ্যক্রমে সেখানে এসেই অভিনয়ে নাম লেখানো।

সদ্যপ্রয়াত এই অভিনেত্রী সেই সময়ে গানের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের অংশ নিয়েছিলেন। প্রশংসা পেলেও একসময় বাদ পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। বলতে থাকেন, তিনি আর গ্রামে যাবেন না। কারণ, পালিয়ে এসেছেন। বাড়িতে গেলে সবাই বকাঝকা করবে। সেই সময় তাকে একজন নাট্যপরিচালক জানান, অভিনয়ে নাম লেখাতে। তাঁর জন্য সুযোগ তৈরি করে ডাকবেন। এভাবে বুঝিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় আর কোনো সুযোগ পাচ্ছিলেন না। আবার হতাশ হন তানিন। এক মেয়েকে নিয়ে সংসার সামলাতে থাকেন।

তানিন সেই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি খালাতো ভাইকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই সংসারে অশান্তি ছিল। সেখানে বাঁচতেই চাইছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। কোনো উপায় না দেখে অভিনয়ের জন্য বরিশালে একটি কম্পিউটারের দোকানে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালু করেন। সেই আইডি দিয়েই পরিচিত হওয়া সেই নাট্যপরিচালকের মাধ্যমে অনেক পরিচালকের সঙ্গে পরিচিত হন ও যোগাযোগ করতে থাকেন।

১৩ বছর আগে তানিন নিজ চেষ্টায় প্রথম সুযোগ পান বিজ্ঞাপনে ছোট ছোট চরিত্রে মডেল হওয়ার। এতেই তিনি খুশি ছিলেন। বরিশাল থেকে এসে অভিনয় করতেন। সুযোগ খুঁজছিলেন ভালো চরিত্রের। দুই বছর পর সুযোগ হয় বরিশালের ভাষায় নির্মিত ‘যমজ’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের।

‘আমি অভিনয় জানতাম না। মোশাররফ করিম ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। ভয়ে হাত–পা কাঁপছিল। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন। সেটাই আমাকে আরও আগ্রহী করে তোলে অভিনয়ে। আমি সেই থেকে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে নাটকে প্রায়ই নিয়মিত অভিনয় করতে থাকি,’ বলেন তানিন। তারপর নিজেকে দাঁড় করাতে কখনো নামমাত্র পারিশ্রমিক, কখনো পারিশ্রমিক ছাড়া একের পর এক কাজ করে গেছেন।

নাটকে কাজ বাড়লে ঢাকায় থাকা শুরু করেন। নাটকে অভিনয়ের পর ইচ্ছা ছিল সিনেমায় নাম লেখানো। সিনেমায় অভিনয়ে তাঁর আদর্শ শাবনূর। কিন্তু সিনেমায় তিনি সুযোগ পাচ্ছিলেন না। দুই বছরের চেষ্টায় সুযোগ পান সিনেমায় নাম লেখানোর। এখন পর্যন্ত তাঁর ‘মাটির পরী’, ‘ভালো থেকো’, ‘তুই আমার’, ‘রাজা রানীর গল্প’সহ ৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ৭টি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

তানিন একসময় বুঝতে পারেন, সিনেমার ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন রয়েছে। অভিনয় দিয়ে টিকে থাকা কঠিন। ক্যারিয়ার আজ আছে তো কাল নেই। তত দিনে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে গেছেন। ঢাকায় এসে অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একসময় অভিনয়ের ক্যারিয়ার থাকবে না। আমি যেন সেই সময় নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, সেই জন্য ব্যবসা করতাম। সিনেমায় সব সময় কাজ থাকবে না। যখন ঘরমুখী হব, তখন যেন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারি। পরিবারের পাশে যেন থাকতে পারি, সেই চেষ্টা আমি সব সময় করি। তবে অভিনয়ই আমার ভালো লাগার জায়গা।’

কষ্ট করে ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়েও নানা সময় বাধার মুখে পড়েছেন। প্রায়ই তিনি ফেসবুকে অভিমানের কথা লিখতেন। সেখানে উঠে আসত তাঁকে ঠকানোর কথা, বঞ্চিত হওয়ার কথা, কেউ কাজ থেকে বাদ দিয়েছেন, কেউ পারিশ্রমিক ঠিকমতো দিচ্ছেন না ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গ। গত মাসে লিখেছিলেন, ‘আমি আজকাল বুঝি, চুপচাপ চলে আসাটাও একধরনের আত্মরক্ষা। সব সময় যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় না, অনেক সময় নিজেকে সরিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, গুরুত্ব চাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল নেই, ভুল হলো—নিজেকে এমন জায়গায় ধরে রাখা, যেখানে তোমাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’

শুধু তা–ই নয়, ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে আরও জানা যায়, মা, দুই মেয়েসহ পরিবারের অন্যদের নিয়েই থাকতেন। সবশেষ জুনের প্রথম দিন হাসিমুখে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘সময়টা এমন যে শুধু উড়তে জানলেই হয় না! মর্যাদার জন্য পাখিগুলোকে সুন্দর পালকধারী অথবা কথা বলতে জানতে হয়।’

এটা লেখার পরেদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন চিত্রনায়িকা তানিন সুবহা। এরপর আফতাবনগর বাসার কাছের একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। কিন্তু সন্ধ্যায় আবার অসুস্থতা বোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে বনশ্রীর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন, এরপর মধ্যরাতে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেই সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, সুবহার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। হঠাৎ তানিনের বুকে ব্যথা শুরু হয়, সঙ্গে ঘামছিলেন তিনি। প্রথমে গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা মনে করে ওষুধ খান, কিন্তু এরপর বেশ কয়েকবার বমি করলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অবশেষে দীর্ঘ ৯ দিন তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেন। গতকাল চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তরুণ এই অভিনেত্রী প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর সহকর্মীরা।

ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা থাকলেও সেগুলো মেনেই তিনি সামনে এগিয়ে চলেছেন। অপেক্ষায় ছিলেন সন্তান, মা, ভাই-বোনদের নিয়ে সুখের দিনের। গত মাসের শেষের দিকে সর্বশেষ একটি সাক্ষাৎকারে উঠে আসে সেসব কথা। তিনি বলেছিলেন, ‘কষ্ট মানুষের জীবনে থাকে। আমার জীবনেও রয়েছে। বাবা থাকলে জীবনটা অন্য রকম হতো। আমার মা, ভাই–বোন বাচ্চা—সবাইকে ভালো রাখার জন্য আমি সময় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো স্বপ্ন দেখি, একসময় অনেক ভালো থাকব। ভালো কিছু হবে। পরিবারের জন্যই আমি বাঁচতে চাই।’

অভিনেত্রী | গায়িকা | চিত্রনায়িকা | তানিন সুবহা

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ