সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে দুঃসাহসী একজন সাহাবি ছিলেন মারসাদ ইবনে আবু মারসাদ (রা.)। অসীম সাহসিকতা, সততা ও ত্যাগের মহিমায় তিনি উজ্জ্বল। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মনোযোগী হন। অত্যান্ত সুকৌশলে রাতের অন্ধকারে মক্কা থেকে মুসলিম বন্দীদের উদ্ধার করে মদিনায় নিয়ে আসতেন। মৃত্যুভয়, দুনিয়ার মোহ কিংবা পুরনো সম্পর্ক কোনো কিছুই তাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
আমর ইবনে শুআইব তার পিতা তার পিতামহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারসাদ ইবনে আবু মারসাদ নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে বন্দীদের বহন করে মদিনায় নিয়ে আসত। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কায় ছিল এক ব্যভিচারিণী নারী। তার নাম ছিল আনাক। সে ছিল মারসাদের বান্ধবী। একবার মারসাদ মক্কার জনৈক বন্দীকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার ওয়াদা করে। মারসাদ বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি এলাম এবং মক্কার দেওয়ালসমূহের এক দেওয়ালের ছায়ায় এসে পৌঁছলাম। তখন আনাক এল এবং উক্ত দেওয়ালের পার্শ্বে আমার ছায়া আকৃতি দেখতে পেল। সে আমার নিকটবর্তী হয়ে আমাকে চিনতে পারল। তখন সে বলল, মারসাদ? আমি বললাম, মারসাদ। সে বলল, শুভেচ্ছা! স্বীয় পরিজনের কাছে আসলে। এসো, আমাদের কাছেই আজ রাত যাপন করবে। সে বলল, আমি বললাম, হে আনাক! আল্লাহ তাআলা জিনা হারাম করে দিয়েছে। সে তখন (চিত্কার করে) বলতে লাগল, হে খিমাবাসী, এ লোকটি তোমাদের বন্দীদের বহন করে নিয়ে যায়। তখন আটজন লোক আমাকে পশ্চাত্ধাবন করে। আমি দৌড়ে খুন্দামা পাহাড়ে গেলাম। একটি গুহায় আত্মগোপন করলাম। এরা পেছনে পেছনে এসে আমার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে গেল। তারপর এরা পেশাব করলে আমার মাথায় তাদের পেশাব গিয়ে পড়তে লাগল, কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমার থেকে তাদের অন্ধ করে রাখলেন, (তারা আমাকে দেখল না)। পরে তারা ফিরে গেল। তখন আমি আমার ওয়াদাকৃত লোকটির কাছে ফিরে এলাম এবং তাকে বহন করে নিয়ে চললাম। সে ছিল বেশ ভারী। তারপর ইজখির ঘাসের জঙ্গলে পৌঁছে তার বেল্টগুলো খুলে দিলাম। অতিকষ্টে তাকে বয়ে নিতে লাগলাম। অবশেষে মদিনায় পৌঁছলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আনাককে বিয়ে করে নেব? কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) নীরব রইলেন। আমাকে কোনো জবাব দিলেন না।
অবশেষে নাজিল হলো কোরআনের আয়াত—
‘ব্যভিচারী পুরুষ-ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করে না এবং ব্যভিচারিণী নারী, তাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া কেউ বিয়ে করে না, আর মুমিনদের জন্য এটা হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, হে মারসাদ ! ব্যভিচারী ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ভিন্ন কাউকে বিয়ে করবে না আর ব্যভিচারিণীও ব্যভিচারী বা মুশরিক ভিন্ন কাউকে বিয়ে করবে না। সুতরাং তুমি তাকে (আনাককে) বিয়ে করতে পারবে না। ( তিরমিজি, হাদিস : ৩১৭৭)
এ হাদিস থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায় ।
১. নৈতিকতা ও আত্মসংযম। জিনা একটি মহাপাপ। এর থেকে দূরে থাকা সবার জন্য অপরিহার্য।
২. চরিত্রবান জীবনসঙ্গী নির্বাচন। একজন মুমিন নারী বা পুরুষের জন্য চরিত্রবান জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা অত্যাবশ্যক। কারো অর্থবিত্ত বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে পড়া নির্বুদ্ধিতা।
৩. আল্লাহর পথে গায়েবি সাহায্য। আল্লাহর পথে নিষ্ঠা ও আমানদারিতার সঙ্গে কাজ করলে গায়েবি সাহায্য আসে।