কালো জাদু হলো এক ধরনের প্রাচীন তন্ত্র-মন্ত্র বা অপতান্ত্রিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে আহ্বান করে জীবজগতের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা হয়। এটি এমন একটি ঘৃণিত কাজ, যা ব্যক্তির নৈতিকতা, বিশ্বাস এবং মানবিকতাকে ভেঙে দেয়। সাধারণত হিংস্র উদ্দেশ্যে, কারও ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে বা নিজ স্বার্থে এই জাদু প্রয়োগ করা হয়।
জাদু-টোনা এগুলো নতুন কিছু নয়, বরং তা যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একশ্রেণির নিকৃষ্ট লোক এর সাথে জড়িত ছিল এবং আছে। সুলায়মান (আ.)-এর যুগে জাদু বিদ্যার প্রচলন ছিল। তবে তিনি জাদুকর ছিলেন না। তাঁর মৃত্যুর পর কিছু শয়তান জাদুর বই মাটির নিচে লুকিয়ে রেখে মানুষের নিকট গুজব ছড়িয়ে দেয়, যে এই বইগুলো সুলায়মান আলাইহিসালাম এর শক্তির উৎস। তখন সাধারণ মানুষ তখন বইগুলো বের করে এবং এগুলো শিখে এই নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে যায়। কিছু লোক জিন ও শয়তানের মাধ্যমে কিছু অলৌকিক বা ভেলকি দেখাতো। তা দেখে অন্য মানুষরাও আকৃষ্ট ও অভিভূত হয়ে যেত।
কালো জাদুর প্রভাব ও পরিণতি
এই জাদুর প্রভাবে সুস্থ-সবল মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, চিকিৎসায় কোনো ফল নাও আসতে পারে, মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি এটি একটি পরিবার বা একটি চাকরি, ব্যবসা বা সামাজিক সম্পর্ক ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। বাড়তে পারে শত্রুতা, ঘটতে পারে অস্বাভাবিক আচরণ বা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো। কাউকে অসুস্থ বা উন্মাদ করে তোলা। ব্যবসা বা সৌভাগ্য বন্ধ করে দেওয়া। অন্যের প্রতি ঘৃণা বা ভালোবাসা জাগানো। এছাড়াও আরও বেশ কিছু অস্বাভাবিক কিছু দেখা দেয় মানুষের আচরণে।
ইসলামে কালো জাদুর অবস্থান
ইসলামধর্মে কালো জাদু তথা ক্ষতিকর তন্ত্র-মন্ত্র সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং কুফরি কাজ হিসেবে চিহ্নিত। এই পাপ কাজে লিপ্ত ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করে, তবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তির জন্য অনুশোচনা ও তাওবা একান্ত প্রয়োজন, নতুবা ইসলামি আইন অনুযায়ী কঠোর দণ্ডপ্রাপ্ত হবার যোগ্য সে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাকো—১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা, ৭. নিরপরাধ নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়া।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৬৪)
আধুনিক সময়ে কালো জাদুর বিস্তার
বর্তমানে অনেক আলেমের মতে, সমাজে কালো জাদুর ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এ থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট আমল ও কোরআন দোয়ার চর্চা করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
জাদু থেকে রক্ষার করণীয় কিছু আমল
১. সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)
২. এই দোয়া পাঠ করা—‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুরু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা, ওয়াহুয়াস্ সামিউল আলীম।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ১৯৩৮)
৩. ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
৪. ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বুলানো—দিনে তিন বার। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
৫. সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া পড়া—‘আল্লাহুম্মা ‘আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাম’ই, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)
৬. ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’ পাঠ করা। (মুসলিম, হাদিস : ২৭০৯)
নবী করিম (সা.)-এর ওপর জাদু ও তাঁর ঝাড়-ফুঁকের দোয়াটি পাঠ করা। প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপরও একবার কালো জাদু প্রয়োগ করা হয়েছিল। তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁকে নিম্নোক্ত দোয়াটি শিখিয়েছিলেন:
‘বিসমিল্লাহি আরকিকা। মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরকিক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৮৬)
সুরা ফাতিহা ‘সুরা শিফা’ নামে পরিচিত। এটি আরোগ্যের জন্য উপযোগী।
জাদু, কুফরি ও শয়তানের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে ঈমান ও পবিত্রতার সঙ্গে থাকতে হবে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে।