পৃথিবীতে প্রচলিত আসমানি ধর্ম তিনটি : ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টবাদ। পবিত্র কোরআনে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের আহলে কিতাব ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মুসলিম বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এতে অনেকের ধারণা হতে পারে ইসলাম পূর্ববর্তী আসমানি ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন এবং পূর্ববর্তী নবীদের শরিয়তের সঙ্গে শরিয়তে মুহাম্মাদির সম্পর্ক বিরোধপূর্ণ। তবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত ইসলাম সব নবী-রাসুলের ধর্ম। তা পূর্ববর্তী শরিয়তকে পূর্ণতা দান করেছে মাত্র।

প্রথম নবী (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুল ইসলামের অভিন্ন মৌলিক বিষয়গুলোর দাওয়াত দিয়েছে। তাদের সবাই ওহিপ্রাপ্ত ছিলেন ছিলেন, যা মানবজাতিকে হেদায়াত ও সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯)

মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবীদের ভূমিকা কি ছিল তা সম্পর্কে বলেন, ‘বোলো, ‘আমি তো রাসুলদের ভেতর নতুন নই। আমি জানিও না, আমার ও তোমাদের সাথে কী আচরণ করা হবে। আমার কাছে যে ওহি পাঠানো হয় আমি শুধু তাই মেনে চলি। একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আমি আর কিছু নই।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত : ৯)

অর্থাত্ সব নবীর দায়িত্ব ছিল কেবল আল্লাহর নির্দেশিত বিষয়গুলো মানুষের ভেতর প্রচার করা। আর তাদের শরিয়তগুলো ভেতর যে মিল ও অমিল ছিল, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই ছিল। তবে মুহাম্মদ (আ.)-এর আগমনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ধর্মগুলো রহিত হয়ে গেছে। তাই পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসরণ করে বর্তমানে নাজাত বা মুক্তি পাওয়া যাবে না।

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় নবী-রাসুলগণের দাওয়াতের মূল বিষয়গুলো অভিন্ন ছিল। যেমন প্রত্যেক রাসুল তাঁর সম্প্রদায়কে তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। তাওহিদের মূলকথা হলো বিশ্বাস ও আনুগত্যে আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় মেনে নেওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমার পূর্বে যে রাসুলই প্রেরণ করেছি তাকে এই ওহি পাঠিয়েছি যে কোনো উপাস্য সত্য নয়; আমি ছাড়া; অতএব, তোমরা আমারই উপাসনা কোরো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২৫)

মহানবী (সা.)-এর হাদিস দ্বারাও নবীদের অভিন্ন দ্বিনের প্রচার করার বিষয়টি প্রমাণিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা ইবনে মারিয়ামের ঘনিষ্ঠতম। নবীরা একে অন্যের বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মতো। তাঁদের মা ভিন্ন ভিন্ন; কিন্তু ধর্ম (আকিদা) অভিন্ন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৪৩)

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম যা গ্রহণ করার নির্দেশ আল্লাহ নবীদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-কে দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তার প্রভু তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কোরো তখন সে বলল, আমি জগতগুলোর প্রভুর প্রতি ইসলাম (আত্মসমর্পণ) গ্রহণ করেছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩১)

নবী ইবরাহিম ও ইয়াকুব (আ.) নিজ নিজ সন্তানদের ইসলামগ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘অতএব তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মৃত্যুবরণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩২)

বরং ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের কাছ থেকে ইসলামের ওপর অটল থাকার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তারা পিতাকে আশ্বস্ত করে বলে, ‘আমরা আপনার ও আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য তথা এক উপাস্যের ইবাদত করব। আর আমরা তার প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩৩)

বনি ইসরাইলের প্রতি মুসা (আ.)-এর আহ্বান ছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান থাকে তাহলে তার ওপর ভরসা কোরো, যদি তোমার  মুসলিম হও।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৮৪)

ঈসা (আ.)-এর সঙ্গী ও সাহায্যকারীরা তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫২)

উল্লিখিত আয়াতগুলো প্রমাণ করে, ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত আসমানি ধর্মের একটি উপাধি। যা ইতিহাসের প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়তের যুগ পর্যন্ত নবীরা ও তাঁদের অনুসারীদের বচনে যার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।’ (আর-রুসুল ওয়ার-রিসালাত, পৃষ্ঠা ২৪৩)

মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের মধ্য দিয়ে ইসলামী শরিয়তকে পূর্ণতা দান করেছেন। ফলে ইসলাম এখন সকল যুগ ও স্থানের উপযোগী। আর এ কারণেই পূর্ববর্তী শরিয়তগুলো রহিত হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী শরিয়তের কিছু কিছু বিষয় আল্লাহ পরবর্তীদের জন্য কার্যকর রেখেছেন।

আল্লাহ সবাইকে সঠিক দ্বিন অনুসরণের তাওফিক দিন। আমিন।