ভারতের মুম্বাই শহরে একজন পাকিস্তানি নাগরিক তার স্ত্রীকে খুনের পর আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সম্প্রতি মুম্বাইয়ের খারঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি উর্দুর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- ৪৫ বছর বয়সি পাকিস্তানি নাগরিক নূতন দাস ওরফে সঞ্জয় ও তার ৩৫ বছর বয়সি স্ত্রী স্বপ্না নূতন দাস।
মুম্বাই পুলিশের মতে, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে সঞ্জয়। পরে একই ছুরি দিয়ে নিজে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় হত্যা ও আত্মহত্যার ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
সঞ্জয় ও স্বপ্না পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সুক্কুর শহরের বাসিন্দা। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসেন এবং মুম্বাইয়ের খারঘর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, পাকিস্তানি এই দম্পতি দীর্ঘমেয়াদী ভিসায় ভারতে বসবাস করছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে; যারা স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে।
উল্লেখ্য, ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে ভারতে অভিবাসন করতে ইচ্ছুক পাকিস্তানি হিন্দু নাগরিকদের দীর্ঘমেয়াদী ভিজিট ভিসা দেয়। এ ভিসার ভিত্তিতে তারা ভারতে থাকার এবং নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা সব পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে এ আদেশ সেইসব হিন্দু নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না; যারা পাকিস্তান থেকে এসে দীর্ঘমেয়াদী ভিজিট ভিসায় ভারতে ছিলেন।
এ ধরনের ভিসা পাওয়া পাকিস্তানি হিন্দুরা সাধারণত স্থায়ীভাবে ভারতে অভিবাসন করতে চান।
পুলিশ কী বলছে
মুম্বাই পুলিশের মতে, সঞ্জয়ের ছেলে টিউশন থেকে বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ দেখতে পেলে খুনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। কলিং বেল বাজানোর পরও দরজা না খোলায় প্রতিবেশীরা মুম্বাইয়ে বসবাসকারী স্বপ্নার বোন সঙ্গীতাকে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করেন।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার প্রশান্ত মোহতে বলেন, স্বপ্নাকে ফোন করে কোনো সাড়া পাননি সঙ্গীতা। পরে তিনি স্বপ্নার বাড়িতে যান এবং যেখানে স্বপ্না ও সঞ্জয়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই স্বপ্না মারা যান। আর সঞ্জয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা প্রশান্ত মোহতে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, সঞ্জয় ও তার স্ত্রী স্বপ্নার মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক হয়েছিল। একপর্যায়ে সঞ্জয় রান্নাঘর থেকে ধারালো ছুরি এনে তার স্ত্রীকে আঘাত করে। স্বপ্নার ঘাড়, কাঁধ এবং পিঠে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়। ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর সঞ্জয় একই ছুরি দিয়ে নিজেকেও আঘাত করে তার মৃত্যু ঘটায়।
খারঘরের সিনিয়র পুলিশ পরিদর্শক দীপক সুরভে জানিয়েছেন, সঞ্জয় গত মাসে কিছু প্রতিবেশীর উপস্থিতিতে স্বপ্না দাসকে মারধর করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু স্বপ্না এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, আর্থিক অনটনের কারণে এই দম্পতি প্রায়ই ঝগড়া করতেন এবং তারা দুজনেই পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন।
‘সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আমার বোন প্রাণ হারিয়েছে’
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে বসবাসকারী স্বপ্নার ভাই বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, তার বোন বহু বছর ধরে পারিবারিক সহিংসতার শিকার এবং এ নিয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছেন।
বিজয় বলেন, স্বপ্না বলতেন যে তিনি এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবেন এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, তার তিন ভাই এবং পাঁচ বোন আছে, স্বপ্না বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন।