সর্বশেষ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি নির্দেশনা
লন্ডনে ‘একান্ত বৈঠকের’ আলোচনা জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে
কিশোরীকে মোবাইল টাওয়ারে উঠিয়েছে ‘‌জিন’!
বিএনপিসহ ৩০ দলের সঙ্গে আবারও বসছে ঐকমত্য কমিশন
জার্সিতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে কানাডার লিগে শমিত
নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে যে বার্তা দিলেন মার্কিন সিনেটর
হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি: এলএনজি সংকটের আশঙ্কায় বাংলাদেশ
কারাগারেই ফাঁস দিলেন সেই অস্ত্রধারী সুজন, মৃত ঘোষণা
২৯৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী যারা
মানিকগঞ্জে ছিন্নমূল ও আশ্রয়হীন মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ
‘ইসরায়েলি চক্রান্ত রুখতে ইসলামি ঐক্য জরুরি’
দইয়ের সঙ্গে ফল খেলে হতে পারে বিপদ
সাদিয়া আয়মানের এই ১০টি লুক বলছে, এভাবেও আকর্ষণ ছড়ানো যায়
যেন সবজির টুথব্রাশ! সস্তার এই পাতা কাঁচা চিবোলেই
লাল শাড়ির লাস্যময়ী লুকে আমাদের তারকারা

হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি: এলএনজি সংকটের আশঙ্কায় বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বিশ্বজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইরান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ, হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বাংলাদেশও এর তীব্র ধাক্কা থেকে রেহাই পাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহে বিপদ ঘণ্টা
বাংলাদেশের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রধান উৎস কাতার ও ওমান। এই দুই দেশ থেকে আসা সিংহভাগ এলএনজিই হরমুজ প্রণালি হয়ে বাংলাদেশে আসে। ফলে এই কৌশলগত নৌপথ বন্ধ হলে বাংলাদেশের গ্যাস সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, কাতারের সঙ্গে ১৫ বছর এবং ওমানের সঙ্গে ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে। চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আসার কথা, যার মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪টি কার্গো ইতোমধ্যেই দেশে পৌঁছেছে। তবে হরমুজ প্রণালির সম্ভাব্য সংকট ভবিষ্যতের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এখনো পর্যন্ত সরবরাহে কোনো সমস্যা হয়নি। কাতারের সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয়ের জন্যই সমস্যা সমান। তবে পরিস্থিতি যদি খারাপ দিকে যায়, তখন বিকল্প চিন্তা করতে হতে পারে।”

শিল্প খাতের উদ্বেগ: উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি রপ্তানি হ্রাস
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এই সম্ভাব্য সংকটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি হুমকিতে পড়বে। ওই রুট বিপজ্জনক হলে স্বাভাবিকভাবেই জাহাজ পরিচালকরা যাবেন না। আর গেলেও বীমা খরচ এত বেশি হবে যে, এলএনজির দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে।”

বৈশ্বিক তেলের বাজারে অস্থিরতা
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার প্রভাব ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে দৃশ্যমান। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম ১২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৮.৫ ডলারে পৌঁছেছে। জ্বালানি বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, চলমান উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে তেলের দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব
বাংলাদেশে গ্যাসের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প এলএনজিনির্ভর হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি ও অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় এবং শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যয়ও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এতে একদিকে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারাও তুলনামূলক বেশি দামের কারণে অর্ডার কমিয়ে দিতে পারেন — যা বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে রপ্তানি আয়ের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি রপ্তানির প্রধান পথ হলো হরমুজ প্রণালি। শুধু এলএনজি নয়, প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলও এই রুট দিয়ে বিশ্ববাজারে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো — যেমন ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ — এই গুরুত্বপূর্ণ রুটের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এই দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ