বছরজুড়েই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের চিরচেনা ভুবনে ব্যস্ত সময় কাটছে অভিনেত্রী ও মডেল রুকাইয়া জাহান চমকের। হঠাৎ করেই যেন তাঁর এ ব্যস্ততায় ছেদ পড়েছিল। শুটিং ব্যস্ততা না থাকলেও সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব ছিলেন তিনি। রাজপথেও তাঁকে দেখা গেছে সংগ্রামীর ভূমিকায়। এ যেন অন্য এক চমক। গত এক মাসে তাঁর ফেসবুক আইডিতে ঢুঁ মারলেই বিষয়টি স্পষ্ট হঠে ওঠে।
কোটা নিয়ে আন্দোলনে সরব ছিলেন এ অভিনেত্রী। যখন থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন ওই সময় থেকেই শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে আসছিলেন তিনি। ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরুতেই আলাপ হয় তাঁর সঙ্গে।
অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান। দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি। আমার আপন ছোট ভাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তার সঙ্গে যখন আন্দোলনে গিয়েছি, তখন চোখের সামনে শিক্ষার্থীদের গুলি খেতে দেখেছি। এর একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে আপলোড করেছিলাম। ফেসবুক থেকে বারবার রিপোর্ট করে নামিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। আমি একজন ক্ষুদ্র অভিনয়শিল্পী হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছি। শহীদ মিনারে মিছিলে মিছিলে আওয়াজ তুলেছি। জনমত গঠন করেছি। কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরবর্তী সংঘর্ষ সহিংস পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে আন্দোলনকে বেগবান করার চেষ্টা করেছি। বিশ্বাস ছিল, বিজয় আমাদের হবেই। হয়েছেও তাই। ছাত্রদের দাবি না মানায় তোপের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরেছি।’
বলা চলে গত এক মাসেই দেশের প্রেক্ষাপট অকেবারেই পরিবর্তন। এসেছে নতুন সরকার। অনেকেই অনেকভাবে পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন। নতুন দেশকে কীভাবে দেখতে চান? এমন প্রশ্নে চমকের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘এক কথায় যদি বলতে হয় তাহলে বলব, একেবারে বৈষম্যবিরোধী। যেখানে কোনোরকম বৈষম্য থাকবে না, এমন বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে সরকার এবং জনগণের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। জনগণ চাইলেই সরকারের যে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে পারবে। প্রশ্ন তুলতে পারবে সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রগঠন সবকিছু নিয়ে।’ নতুন সরকারের অধীনে যেন আমরা ন্যায়কে ন্যায় বলতে পারি, অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারি– এটাই আমার মনেপ্রাণে চাওয়া।’
শিল্পীরা রাজনীতি করবেন, কিন্তু তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে বলে মনে করেন তিনি। শিল্পীদের নিয়ে আলাদা একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে তাগিদ অনুভব করেন এ অভিনেত্রী।
চমক বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে শিল্পীরা অবশ্যই কথা বলবেন। দেশ নিয়ে ভাববেন। কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারবেন না। দলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে না বলে আমি মনে করি। এর আগে আমরা দেখেছি, দেশের রাজনৈতিক ট্যাগ ব্যববহার করে তারা অনেক সুযোগ নিয়েছেন। এটি ঠিক নয়। এখন দ্রুত আমাদের শিল্পীদের একটি কমিটি গঠন করা উচিত। যেটি আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন রক্ষার কাজে দেবে। ’
মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয়ে ২০১৭ সালে বিনোদন অঙ্গনে আসেন চমক। ছোটবেলা থেকে নাচের তালিম নিয়েছেন তিনি। লেখাপড়ার বিরতি শেষে ২০২০ সালে ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করেন তিনি। ছোট পর্দার পাশাপাশি ওটিটিতেও সরব এ অভিনেত্রী। ছোট পর্দার কাজে না ফিরলেও অনলাইনে টিভিসি ও ব্র্যান্ড প্রমোশনের কাজ করছেন তিনি। তবে শিগগিরই কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন চমক।