সুষম খাবার খেলেই একজন সুস্থ মানুষের রোজকার ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। কেবল বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট। কখনো কখনো একজন ব্যক্তির একাধিক সাপ্লিমেন্টেরও প্রয়োজন হতে পারে। তবে সব সাপ্লিমেন্ট আবার একই সময়ে গ্রহণ করাও উচিত নয়।
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন, খাবারের মাধ্যমে যখন কোনো পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না, কেবল তখনই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা হলে তা দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হলেও সাপ্লিমেন্টের মাত্রার বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। একসঙ্গে গ্রহণ করতে নেই, এমন কিছু সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কেও জেনে নিন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে।
ক্যালসিয়াম ও আয়রন
ক্যালসিয়াম ও আয়রনের সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হয় অনেকেরই। তবে মনে রাখতে হবে, ক্যালসিয়ামের উপস্থিতিতে আয়রন ঠিকভাবে শোষিত হয় না। অর্থাৎ আয়রন আর ক্যালসিয়াম একসঙ্গে গ্রহণ করা হলে সাপ্লিমেন্টে থাকা আয়রনের অনেকটা অংশই আপনার কাজে আসবে না। তাই আয়রন ও ক্যালসিয়াম খেতে হবে দুটি ভিন্ন সময়ে। আয়রন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে খালি পেটে। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে কোনো খাবার খাওয়ার পর। এই দুই সাপ্লিমেন্ট আপনি দুটি ভিন্ন বেলায় খেতে পারেন। কাছাকাছি সময়ে খেতে চাইলেও অন্তত দুই ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন। যে বেলায় আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছেন, সেই বেলায় টক ফল খাওয়া ভালো। তাতে আয়রনের শোষণ বাড়বে।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্ট একসঙ্গে খেলেও ব্যাপারটা প্রায় এমনই দাঁড়ায়। ক্যালসিয়ামের উপস্থিতিতে ম্যাগনেশিয়াম সঠিকভাবে শোষিত না-ও হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রেও দুই সাপ্লিমেন্টের মাঝে অন্তত দুই ঘণ্টা ব্যবধান রাখা প্রয়োজন।
ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি১২
ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি১২ একসঙ্গে গ্রহণ করা হলে ভিটামিন বি১২–এর শোষণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে সাপ্লিমেন্টে থাকা ভিটামিন বি১২ দেহের তেমন কাজে আসে না, তাই এ ক্ষেত্রেও এই দুই ভিটামিন গ্রহণের মধ্যে অন্তত দুই ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান রাখা প্রয়োজন। ভিটামিন বি১২ শোষণ না হওয়ার এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়ে ওঠে যখন ভিটামিন সি একটু বেশি মাত্রায় গ্রহণ করা হয়।
ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে
ভিটামিন ই যদিও বেশ নিরাপদ, তবু ভিটামিন ই-এর সঙ্গে ভিটামিন কে গ্রহণ করা উচিত নয়। তাতে ভিটামিন কে ঠিকভাবে শোষিত হয় না। তবে এখানেই সমস্যার শেষ নয়। সাধারণত ভিটামিন কে তাঁকেই গ্রহণ করতে বলা হয়, নির্দিষ্ট কিছু কারণে যাঁর রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে। এই ব্যক্তি উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ই গ্রহণ করলে তাঁর রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও বাড়ে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে অ্যাসপিরিন–জাতীয় কোনো ওষুধ, যা রক্তকে তরল রাখে, তা সেবন করার ইতিহাস থাকলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আরও বেশি বাড়ে। তাই যে সমস্যার জন্যই আপনি চিকিৎসকের কাছে যান না কেন, কী কী ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্ট আপনি গ্রহণ করছেন, তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন।
মাল্টিভিটামিন এবং অন্য কোনো সাপ্লিমেন্ট
মাল্টিভিটামিন বা মাল্টিমিনারেল সাপ্লিমেন্ট চলাকালীন অন্য যেকোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। একটি মাল্টিভিটামিন বা মাল্টিমিনারেল সাপ্লিমেন্টে নানা উপাদান থাকে। এসবের মধ্যেই কোনো উপাদান যদি আপনি আলাদাভাবেও গ্রহণ করেন, তাহলে সেটির আধিক্য দেখা দিতে পারে আপনার দেহে। হতে পারে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে কিছু সময়ের ব্যবধান রেখে সাপ্লিমেন্ট দুটি সেবন করেও কিন্তু কোনো উপকার মিলবে না। তবে নির্দিষ্ট কোনো উপাদানের ঘাটতি থাকলে তা বিবেচনা করে একজন চিকিৎসক মাল্টিভিটামিন বা মাল্টিমিনারেলের পাশাপাশি অন্য কোনো সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে না বলেই এসব একসঙ্গে গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সূত্র: প্রথম আলো