সুইস ব্যাংকে বিশ্বের ধনকুবেররা একসময় টাকা রাখা নিরাপদ মনে করতেন। এখনও করেন। তবে একসময় সুইস ব্যাংক আমানতকারীর নাম বা তথ্য কিছুই জানাতো না। এখন আমানতকারীর নিজ দেশের সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য জানতে চাইলে জানানো হয় অফিসিয়ালি। তবে সম্পূর্ণ নয়।
সুইস ব্যাংকের ইতিহাস বেশ পুরনো। ৩০০ বছর আগে ইউরোপের ধনীশ্রণির লোকেদের সম্পদ রক্ষা করার জন্য এই ব্যাংক চালু হয়।
সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে সুইস ব্যাংকের নাম। কারণ বিস্ময়কর গতিতে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে। এক বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৩,২৪৬ শতাংশ বা ৫৭ কোটি ১৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি সুইস ফ্রাঁ ১৪৯ টাকা দর ধরলে জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ২৬৪ কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তবে বাংলাদেশিরা কীভাবে কোথা থেকে এনে বিপুল অর্থ জমা করেছেন তার কোনো ব্যাখ্যা নেই প্রতিবেদনে। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ কিছু তথ্য সম্প্রতি দিয়ে থাকলেও সম্পূর্ণ তথ্য ব্যাংকটি দেয় না। এ জন্য সুইস ব্যাংকের প্রতি মানুষের আগ্রহের অন্যতম কারণ হলো এর গোপনীয়তা। দ্য গ্র্যান্ড কাউন্সিল অব জেনেভা ১৭১৩ সালে প্রথম ব্যাংক গোপনীয়তার আইন প্রণয়ন করেছিল।
সুইস ব্যাংকের ব্যবসা সবচেয়ে ভালো জমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। যুদ্ধে আর্থিক সংকট দেখা দেওয়াতে ইউরোপের নানান দেশ জনগণের ওপরে যুদ্ধকর চাপাতে থাকে এ সময় ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের অর্থ লুকিয়ে রাখতে সুইস ব্যাংকের ব্যবহার শুরু করেন। সুইস ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন এডলফ হিটলার। হিটলার ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ডে ১১০ কোটি রেইচমার্ক (পূর্বের জার্মান মুদ্রা পরবর্তীতে যা ভয়েসমার্ক নামে পরিচিত ছিলো) রেখেছিলেন।
সুইস ব্যাংকের আমানতকারী কারা হতে পারবেন? অবশ্যই আর্থিকভাবে ধনী হতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে যে কেউই খুলতে পারবেন সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। তবে এর জন্য মানতে হবে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ওইসিডির কড়া নজরদারি আছে এইসব বিষয়ে। পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সার্টিফিকেটসহ নানা প্রয়োজনীয় কাগজ লাগবে এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য। সুইস ব্যাংকে যারা টাকা রাখেন এরা যে কেউই আগে সেখানে টাকা রেখেছেন এমন ব্যক্তি কিংবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে স্বশরীরের সেখানে উপস্থিত হতে হয় তবে অনেকক্ষেত্রে অনলাইনেও মেলে সেবা। এইজন্য লাগবে সম্পত্তির হিসাবসহ নানা স্টেটমেন্ট।
তবে যে কেউ যদি ভাবেন সুইজারল্যান্ড যাবেন আর অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলবেন, তবে ভাবনাটি ভুল। সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন ১০ হাজার সুইস ফ্রা ব্যাংকে রাখতে হয় বাংলাদেশের টাকায় যার মান প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন নিয়মেও অর্থ নিয়ে থাকে। ইউবিএস গ্রুপে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখলে যেমন লভ্যাংশ পাওয়া যায় সুইস ব্যাংক সেরকম নয়। উল্টো আপনাকেই দিতে হবে মাসিক লাভ। এছাড়াও দিতে হবে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের খরচ।
লিংক:https://azolalegal.com/en/blog/yak-vidkryty-vklad-u-shvejtsarskomu-banku/