অনেকেই যখন এয়ার কন্ডিশনার (এসি) কেনার কথা ভাবেন, তখন প্রথমেই যে শব্দটি শোনা যায় তা হলো—‘১ টন’, ‘১.৫ টন’ বা ‘২ টন’ এসি। বাংলাদেশে পাওয়া এই ১ টনের এসিগুলোর ইনডোর ও আউটডোর মিলিয়ে ওজন হয় সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ কেজির মতো। তাহলে কেন এই টনের হিসাব?
আসলে এই ‘টন’ বলতে কি বোঝানো হয়? অনেকে হয়তো ভাবেন, এটা এসির ওজনের মাপ! আসলে তা নয়। ‘১ টন’ এসি বলতে বোঝানো হয় এসির কুলিং ক্যাপাসিটি বা শীতলীকরণ ক্ষমতা—এটা কোনোভাবেই ওজনের সাথে সম্পর্কিত নয়।
‘১ টন’ এসি বলতে বোঝানো হয়, একটি এসি প্রতি ঘণ্টায় যতটুকু গরম বাতাস শুষে নিয়ে ঠাণ্ডা করতে পারে, সেই ক্ষমতার একক হিসেবেই ‘টন’ ব্যবহৃত হয়। ঐতিহাসিকভাবে এই ধারণাটি এসেছে বরফ তৈরি বা গলানোর ধারণা থেকে। এক টন এসি মানে, সেই এসির এমন ক্ষমতা আছে যে, এটি এক টন বা ২০০০ পাউন্ড (প্রায় ৯০৭ কেজি) বরফকে ২৪ ঘণ্টায় গলিয়ে ফেলতে যতটুকু তাপ দরকার হয়, ঠিক সেই পরিমাণ তাপ এক ঘণ্টায় সরিয়ে ফেলতে পারে। এই হিসেবে ১ টন এসি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১২,০০০ বিটিইউ (BTU – British Thermal Unit) তাপ সরাতে পারে। ১ বিটিইউ হল সেই পরিমাণ তাপ, যা ১ পাউন্ড পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়াতে প্রয়োজন হয়।
যদি বলা হয় ১.৫ টন এসি, তাহলে সেটা প্রতি ঘণ্টায় ১৮,০০০ বিটিইউ এবং ২ টন হলে ২৪,০০০ বিটিইউ হিট রিমুভ করতে সক্ষম। এই তথ্যগুলো শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং এসির পারফরম্যান্স নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি যদি একটি ছোট ঘরে অতিরিক্ত টননেজের এসি ব্যবহার করেন, তাহলে বিদ্যুৎ অপচয় হবে এবং ঘর অতিরিক্ত আর্দ্র থাকবে। আবার প্রয়োজনের চেয়ে কম টননেজের এসি ব্যবহার করলে কাঙ্ক্ষিত শীতলতা পাওয়া যাবে না এবং এসির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
তাই এসি কেনার সময় শুধুমাত্র ব্র্যান্ড নয়, নিজের ঘরের আকার, অবস্থান এবং ব্যবহারের ধরন বুঝে সঠিক টননেজ নির্বাচন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘১ টন’ মানে আসলে কেবল একটি সংখ্যা নয়—এটি একটি পরিমিতি, যা বোঝায় আপনি কতটুকু ঠাণ্ডা আশা করতে পারেন। বুঝে-শুনে এসি কিনলে না শুধু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, বরং দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রটিও ভালো সার্ভিস দেবে।