সর্বশেষ
১৬ মাসে সাজানো ক্রসফায়ারের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে
হাসিনার ফাঁসির রায়ের কপি পাঠানো হবে ২ মন্ত্রণালয়ে
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আজ ভারতের সঙ্গে লড়াই হামজাদের
ফ্যাটি লিভারের জন্য দুধ খাওয়া ভালো নাকি খারাপ
জ্যাম এড়াতে জেনে নিন মঙ্গলবার রাজধানীর কোথায় কোন কর্মসূচি
তামান্না ভাটিয়া এমারেল্ড গ্রিন আর রোজ-গোল্ডে ঝলক ছড়ালেন নতুন ফটোশুটে
ফ্যাশন আর আবেদনে দশে দশ এই অভিনেত্রী, দেখুন তাঁর সাম্প্রতিক যত লুক
গাজায় নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুমোদন করল জাতিসংঘ
স্থানীয় সরকার বিভাগে বড় নিয়োগ, আবেদন যেভাবে
মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ
মুমিনের অসুস্থতা পাপ-মোচনের মাধ্যম
সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখতে জামায়াত আমিরের আহ্বান
আরাধ্যর জন্মদিনে অমিতাভ বচ্চনের আবেগঘন বার্তা
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদ হেফাজতের
আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে চাই: আবু সাঈদের বাবা

কোটায় চাকরি পেয়ে যেভাবে সম্পদের পাহাড় গড়লেন হারুন

অনলাইন ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হোসেনপুর গ্রামের পাশের হাওরে প্রায় তিন হাজার শতক (৩০ একর) জমিতে তিনতারা মানের ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চালু হওয়া রিসোর্টের এক পাশে ২০টি দোতলা কটেজে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৪০টি কক্ষ (স্যুট)। আছে রেস্টুরেন্ট, পার্টি সেন্টার, শিশুদের গেম জোন ও ওয়াচ টাওয়ার। একেকটি স্যুটের দৈনিক ভাড়া ছয় হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা।

রিসোর্ট এলাকার মাঝে রয়েছে বিশাল আয়তনের একটি দীঘি। এর মাঝখানে হেলিপ্যাড। বিগত সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সচিব এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রিসোর্টে বেড়াতে এসেছেন। বিশাল এসব স্থাপনার মালিক সদ্য সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। তার নিজ বাড়ি পাশের গ্রাম হোসেনপুরে।

রিসোর্টের বাইরে হারুন নিরীহ কৃষকদের তিন-চার শ একর জমি তার অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য দখলের পাঁয়তারা করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, শতাধিক একর জমি বাঁধ দিয়ে গত বছর দখল করে নিয়েছেন। গত শুকনা মৌসুমে হারুনের ছোট ভাই শাহরিয়ারের নেতৃত্বে মিঠামইনের হোসেনপুর থেকে অষ্টগ্রামের ভাতশালা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় মাটির বাঁধ নির্মাণ করেছেন। কৃষকদের জমি কেটে নির্মীয়মাণ বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। তবে বর্ষা এসে যাওয়ায় বাঁধটি সম্পূর্ণ হয়নি।

মিঠামইনের একটি গ্রামের ট্রলারচালক বলেন, ‘হারুন সাবোই এইতানের (এসবের) মালিক। মহামান্যরে সম্মান দেহাইয়া নাম রাখছে পেরসিডেন রিসুট। ’ প্রসঙ্গত, মিঠামইন সদরের কামালপুর গ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়ি।

গত ৭ ও ১৩ আগস্ট সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের প্রশ্ন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা এত অর্থবিত্তের মালিক হন কিভাবে? তাঁর বিপুল সম্পদের কথা লোকমুখে আলোচিত হলেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ প্রশাসন তাঁকে ডিবিপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হারুনের বিপুল সম্পদের উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর নেয় অনেকেই। কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদক মিঠামইন সদর ও হোসেনপুর গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষের সঙ্গে কথা বললেও কেউ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের অভিযোগ, হারুন এবং তাঁর পরিবার রিসোর্টের জন্য অন্যের জমি প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছেন। এর বাইরেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তাঁর। অনেকের জমি ও পুকুর দখল করে ওই সব ভূমির মালিককে বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন অথবা চাপ দিয়েছেন।

যেভাবে সম্পদের পাহাড় গড়লেন হারুন
২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর আট মাসেই এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রিসোর্ট ও অ্যাগ্রো ফার্ম নির্মাণের কাজ শুরু করেন হারুন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গ্রামের পাশের হাওরে হারুনের পরিবারের অল্প পরিমাণ জমি ছিল। তার প্রয়াত পিতা আব্দুল হাশেম ঘাগড়া বাজারে চালের কারবার করতেন। হাওরের সেচ প্রকল্পেও শ্রম দিতেন। হারুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পান। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার এসে তার পদায়ন আটকে দেয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় হারুনের চাকরি স্থায়ী হয়। এলাকাবাসী জানায়, হারুনের বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। আর তার বাবার চাচা ইদ্রিস ওরফে ইদু মোল্লা ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার।

গাজীপুরের এসপি থাকাকালীনই হারুনের ‘ভাগ্যবদল’ ঘটে। সূত্রগুলো জানায়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময় থেকেই হারুন তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ির পাশের হাওরে জমি কিনতে শুরু করেন। নামে-বেনামে তার কমপক্ষে ১০০ একর জমি রয়েছে। আবার শতাধিক একর অন্যের জমি তার দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও হারুনের শতকোটি টাকার সম্পদ থাকার গুঞ্জন রয়েছে।

যাদের জমি হারুনের দখলে
অষ্টগ্রামের বহু কৃষকের জমি রয়েছে রিসোর্টসংলগ্ন হাওরে। এছাড়া একই হাওরে উজান এলাকার বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদী, ভৈরবসহ বিভিন্ন উপজেলার ‘জিরাতিদের’ শত শত একর জমি রয়েছে। ফসল চাষাবাদের মৌসুমে এসব জমির মালিক এসে হাওরে অস্থায়ী বাথান গড়ে বোরো চাষাবাদ করেন। জানা গেছে, অষ্টগ্রাম ও উজানের কৃষকদের জমি ও খাদ হারুনের অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য দখল করা হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে হারুনের পরিবারের কাছে জমি বিক্রি করেছেন।

হারুনের নিজ গ্রাম হোসেনপুর পশ্চিমপাড়ার সৌদি আরবপ্রবাসী মানিক মিয়া জানান, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) থাকাকালীন তার ভাই শাহরিয়ার, কেয়ারটেকার আবুল হাশিম এবং জনৈক গোলাম মওলার নেতৃত্বে তাদের পরিবারের সদস্যরা হোসেনপুরে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমি ২০১৮ সালে দখল করে নেন, যার বর্তমান মূল্য পৌনে দুই কোটি টাকা। ওই সময় তারা তিন ভাইই প্রবাসে ছিলেন। পরে বিদেশ থেকে ফিরে চেষ্টা-তদবির করেও তারা জমি উদ্ধার করতে পারেননি।

তিনি অভিযোগ করেন, হারুনের লোকজন জমি দখল করে রিসোর্টের দীঘির ভেতরে ফেলে জানান, মাছ চাষের জন্য দীঘি করা হচ্ছে। পরে জমি ফিরিয়ে না দিয়ে বিক্রির জন্য চাপ দেন। এ ছাড়া ওই গ্রামের সৈয়দ আলী, ইসলাম উদ্দিন, আব্দুল আলী, ইকবাল হোসেন, ফরিদ মিয়াসহ ১০ থেকে ১৫ জন কৃষকের বেশ কয়েক একর জমি রিসোর্টের আওতায় নিয়ে অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে মানিক মিয়া তাঁদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন।

হারুনের কবজায় একজনেরই ২৫ একর জমি
প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পশ্চিম পাশে অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহম্মদ কমলের ছয় একরের একটি পুকুর রয়েছে। কমল অভিযোগ করেন, হারুন পুকুরটি দখল করে মাছ চাষ করছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

কালের কণ্ঠকে কমল জানান, তার খাদের চারপাশে আরো ১৮-১৯ একর জমি হারুনের কবজায় রয়েছে। তিনি বলেন, হারুনের বাঁধের ভেতরে পড়েছে তার আরও প্রায় সাত একর জমি। এছাড়া বায়না দলিল সূত্রে পাওয়া তার ১২ একর জমি হারুন দখল করে নিয়েছেন। জমিগুলো অষ্টগ্রামের খলাভাঙ্গুরাইল মৌজার। ১২ আগস্ট রাতে কমলের অষ্টগ্রামের বাড়িতে বসে আলাপকালে তিনি বেদখল হওয়া জমির দলিলপত্র এবং নকশায় দাগ-খতিয়ান চিহ্নিত করে দেখান।

কমল সরকারের কাছে হারুনের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি নিরীহ কৃষকদের জমি উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। কটিয়াদীর বনগ্রামের জিরাতি আব্দুল আউয়াল জানান, হারুন জোর করে তাঁর খলাভাঙ্গুরাইল মৌজার সাড়ে পাঁচ একর জমি দখল করেছেন।

বন্ধ অভিযুক্তদের ফোন
সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ভাই, প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট ও অ্যাগ্রো ফার্মের এমডি ডা. এ বি এম শাহরিয়ারের ফোনও বন্ধ রয়েছে।

গত ৭ আগস্ট প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে গিয়ে এমডির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করা হয়। মূল গেটে পাহারায় থাকা লোকজন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমডি স্যার নেই। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। এখন রিসোর্টে কাউকে অ্যালাও করা হচ্ছে না। ’

তবে এ সময় উড়ীয়ন্দ গ্রামের একদল লোক একটি ট্রলারে চড়ে রিসোর্টে আসে। তারা এই প্রতিবেদককে বাধা দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরা হারুনের আত্মীয়-স্বজন।

অনলাইন ডেস্ক

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ