কোনো রোগ হলে উপসর্গ দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। উপসর্গ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় রোগের ধরন। তবে এমন কিছু রোগও থাকে, যেসবের তেমন কোনো উপসর্গ নেই। এ ধরনেরই এক রোগ ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এমন অনেক মানুষই আছেন, যাঁরা এ সমস্যায় আক্রান্ত, কিন্তু দিব্যি সুস্থ জীবনযাপন করছেন। তবু কেন এই রোগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন চিকিৎসকেরা?
প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভার ডিজিজের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না বললেই চলে। রোগটা মূলত কী, জানেন? সহজভাবে বলতে গেলে ব্যাপারটা হলো লিভারে চর্বি জমা হওয়া। দেহের রক্তের বাড়তি চর্বি জমতে থাকে লিভারে। এতে আপনি কোনো সমস্যা অনুভব না করলেও নীরবেই এগিয়ে যেতে পারেন মারাত্মক ঝুঁকির দিকে। এ বিষয়ে জানালেন ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মুসআব খলিল।
প্রাথমিক অবস্থাতেও যে ঝুঁকি
লিভারে তখনই চর্বি জমে, যখন রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেশি থাকে। আর রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেশি থাকার অর্থই হলো এই চর্বির কারণে আপনি হৃদ্রোগের ঝুঁকিতে আছেন। রক্তনালিতে খারাপ চর্বি জমা হলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বাড়ে। বুঝতেই পারছেন, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থাকার পরোক্ষ অর্থ হলো আপনি এসব সমস্যার ঝুঁকিতে আছেন। তাই পেটের অন্য যেকোনো সমস্যার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়েও যদি উপসর্গবিহীন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ধরা পড়ে, আপনাকে সচেতন হতে হবে অবশ্যই।
লিভারের ক্ষতি হতে পারে যখন
দীর্ঘদিন ধরে নীরবে-নিভৃতে লিভারে চর্বি জমা হতে হতে কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। ধীরে ধীরে পেটে এবং পায়ে পানি চলে আসতে পারে, জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এমন সমস্যা প্রতিরোধেও চাই সচেতনতা।
ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে আছেন যাঁরা
- স্থূল ব্যক্তি
- যাঁদের কোমরের মাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি
- যাঁরা কায়িক শ্রম কম করেন
- যাঁদের রক্তে খারাপ চর্বির মাত্রা বেশি
- যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনির রোগ আছে
- যাঁদের কখনো স্ট্রোক হয়েছে
কী করবেন
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ প্রতিরোধে সচেতনতা প্রয়োজন সবারই। চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস। শর্করাজাতীয় খাবার এবং তেল-চর্বির পরিমাণ কম রাখুন। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। পেটে মেদ জমলে অর্থাৎ কোমরের মাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে এই মেদ কমানোর ব্যাপারে যত্নশীল হোন। তা ছাড়া কারও যদি প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ধরা পড়ে, সে ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনপদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন।