রাজধানীর লালবাগ থানার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ পার্ক এখন ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসাবে দেখা দিয়েছে। পার্কের ভেতর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে সুয়ারেজ ও ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করায় সেগুলো মশা-মাছির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ-অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণকাজ করায় পার্কটি পুরো এলাকাকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
আধুনিকায়নের নামে কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কটি সংস্কার করা হলেও তা মশার বংশবিস্তার ও রোগজীবাণুর আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। মাঠের চারপাশ ঘিরে প্রায় পাঁচ ফুট গভীরে সুয়ারেজ ও ড্রেনেজ লাইন নির্মাণ করে সেটির ওপর স্ল্যাব দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তবে লাইনে বৃষ্টির পানি জমায় পরিণত হয়েছে মশা উৎপাদনের কারখানায়। পার্কের ভেতরে রয়েছে কার্পেটিং করা ফুটবল ও ক্রিকেট মাঠ। কার্পেটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে নিুমানের নির্মাণসামগ্রী। ইতোমধ্যে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে কিছু আর্টিফিশিয়াল কার্পেট আনা হলেও তা পুরো মাঠে বিছানো হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, পাঁচ গেটবিশিষ্ট রসুলবাগ পার্কে শিশুদের জন্য কিছু রাইড বসানো হলেও সেগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট। আশপাশে লাগানো লাইটের অধিকাংশই নষ্ট এবং সিসি ক্যামেরাগুলোরও বেশির ভাগই অকেজো। পার্কের চারপাশ ও রাস্তার পাশে ছোট ড্রেনের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলোয় পানি নিষ্কাশনের কার্যকর পথ নেই। ফলে বৃষ্টির পানি জমে সেখানে মশার বিস্তার ঘটছে। বিশেষ করে ড্রেন ও সুয়ারেজ লাইনে জমা পানিতে নানা রোগ-জীবাণুর জন্ম হচ্ছে। পচা পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
রসুলবাগের বাসিন্দা সিয়াম ইসলাম জানান, খেলার সুযোগ থাকলেও মশার উৎপাতে একমুহূর্ত বসাও যায় না। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়।
আরেক বাসিন্দা মো. সামীর বলেন, চার বছর আগে পার্কে আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। আগে চারটি বালুর মাঠে অনেকে খেলাধুলা করত। এখন দুটি কার্পেটিং মাঠ ছাড়া কিছু নেই। আধুনিকতার নামে নিচে পাঁচ ফুট গর্ত করে এর ওপর স্ল্যাব বসিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। নিচে জমা পানিতে মশা বাসা বেঁধেছে। এখানকার বড় বড় মশা কামড়ালে ভীষণ জ্বলে ওঠে। কয়েল, ধোঁয়া কিছুতেই মশা যায় না।
বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্দিষ্ট জায়গায় মশার ওষুধ মাঝেমধ্যে দেয়। কিন্তু পার্কের বাইরে বা অলিগলিতে দেয় না। অনুরোধ করলে জানানো হয়, ‘উপরের নির্দেশনা শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় ওষুধ ছিটানো, অন্য কোথাও দেওয়া যাবে না।’
মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, শিশুদের রাইডগুলো এখন ভাঙা। পার্কের চারপাশে জংলি গাছ ও বৃষ্টির পানিতে মশার জন্মাচ্ছে। বাসিন্দা মো. উজ্জ্বল বলেন, পার্কের অধিকাংশ লাইটই জ্বলে না। ক্যামেরাগুলো অচল।
বিএনপি নেতা মো. খোকন বলেন, পুরো পার্কের রাস্তা ও ড্রেনেজব্যবস্থায় দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। গর্ত করে স্ল্যাব বসানোয় সেখানে বৃষ্টির পানি জমছে। জমা পানিতে মশার জন্ম হচ্ছে, দুর্গন্ধ ও রোগ ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন শুধু ওপরে ওষুধ ছিটায়, কিন্তু গর্তে ওষুধ দিতে পারে না। ফলে মশা মরে না।
এছাড়া এলাকার গলিগুলো দুই-তিন ফুট প্রশস্ত এবং সেখানে ড্রেন-সুয়ারেজ একই লাইনে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় ময়লা, দুর্গন্ধ এবং মশা বাসা বেঁধেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অঞ্চল-১ সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফারিয়া ফয়েজ যুগান্তরকে বলেন, স্ল্যাবের নিচের ফাঁকা জায়গায় মশার ওষুধ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা তো কাঠামো ভেঙে ওষুধ দিতে পারি না। তিনি বলেন, জমে থাকা ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব বর্জ্য বিভাগের। আর স্ল্যাব ও ড্রেনেজ কাঠামো দেখে প্রকৌশল বিভাগ। সংস্কার করে সঠিক প্রবেশপথ রাখলে কার্যক্রম চালানো সহজ হবে।