পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ। তারপর এর সবচেয়ে পুষ্টিকর অংশটি দিই ফেলে। দেখুন এর উপকারিতা আর খাওয়ার পদ্ধতি।আমাদের দেশের খুব জনপ্রিয় একটি ফল জাম। এ সময় আমরা ভর্তা করে, মেখে বা এমনিতেই মুঠো ভরে পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ। তারপর এর সবচেয়ে পুষ্টিকর অংশটি দিই ফেলে। এর উপকারিতা আর খাওয়ার পদ্ধতি জানলে আপনি আর কখনোই তা করবেন না। প্রাচীনকাল থেকেই কিন্তু আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে জামের বিচি। বিশেষজ্ঞদের মতে জামের বিচির গুঁড়া বিশেষভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সেই সঙ্গে এর আছে বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন দেখে নিই এই মৌসুমি ফলের ফেলে দেওয়া অংশটি আমাদের কত উপকার করতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
জামের বিচিতে থাকা জ্যাম্বোলিন ও জ্যাম্বোসিন নামক সক্রিয় উপাদান রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে এবং শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে।
জামের বিচির গুড়োয় গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে কম থাকে,ফলে ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা ছাড়ে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। গ্লুকোসুরিয়া (প্রস্রাবে অতিরিক্ত চিনি) কমাতেও এটি কার্যকর।
শরীরকে ডিটক্স করে
জামের বিচির গুঁড়া একটি ডিটক্সিফায়িং উপাদান, যা শরীরের স্বাভাবিক ঘাম ও প্রস্রাবের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীর পরিষ্কার ও সতেজ থাকে।

লিভার ভালো রাখে
এই বিচি থেকে মিলবে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।ফলে লিভার থাকে সুস্থ । এটি প্রাকৃতিক লিভার স্টিমুল্যান্ট, অর্থাৎ লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে
জামের বিচির গুঁড়ায় আরো আছে এলাজিক অ্যাসিড, যা রক্তচাপের হঠাৎ ওঠানামা, নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খনি এই জামের বিচি
ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফেনলিক যৌগ আছে জামের বিচিতে। এই দুই ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। এই উপাদানগুলো কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং শরীরকে করে আরও সজীব ও শক্তিশালী। বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।

জীবাণুরোধী গুণ আছে এর
জামের বিচির গুঁড়ায় থাকে জীবাণুরোধী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলী, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলির জন্য মুখের দুর্গন্ধ ও মাড়ির প্রদাহ রোধে জামের বিচি দারুণ কাজ করে। মুখ গহবরের স্বাস্থ্যের জন্য এই বিচির গুঁড়া খুবই উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
জামের বিচির পাউডার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে দেহে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে। যাঁদের পিসিওএস আছে খালি পেটে এই গুঁড়া সেবনে দারুণ কাজ করে।
সামগ্রিক সুস্থতা দেয়
জামের বিচির গুঁড়া শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেই নয়, লিভার সুরক্ষা, রক্তচাপ ও দেহ পরিষ্কারে অনন্য ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে গ্রহণ করলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান হয়ে উঠতে পারে।


কীভাবে বানাবেন জামের বিচির পাউডার?
জামের বিচি একটি ছড়ানো পাত্রে রেখে দুই তিন দিন কড়া রোদে শুকান। এরপর এর ওপরের বেগুনি অংশ নখ বা ধারালো কিছু দিয়ে তুলে নিন। এবার তাওয়ায় শুকনা করে টেলে পাটায় বা গ্রাইন্ডারে পাউডার করে নিন।


কীভাবে সেবন করবে
এই জামের বিচির গুঁড়া আধা থেকে ১ চা-চামচ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পান করলে পাবেন বহু স্বাস্থ্য উপকার।
তবে ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন এমন কেউ হলে এটি গ্রহণের আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো। যাঁরা রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাঁদের জন্য এই গুঁড়া কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বা অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি এই মৌসুমি দেশি ফলের সবচেয়ে পুষ্টিকর অংশটিই কি ফেলে দেবেন না।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া
ছবি: ইন্সটাগ্রাম