হাতেই উঠে আসছে সদ্য পাকা করা একটি সড়কের পিচ কার্পেটিং। পা দিয়ে ঘষা দিলেও উঠে যাচ্ছে সড়কের পিচ ঢালাই। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার তিওরকুড়ি থেকে পাঁচবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি পর্যন্ত চার কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি।
সড়কটির সংস্কারে খরচ হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা। নির্মাণ শেষের মাত্র এক মাসের মাথায় সড়কের কার্পেটিং উঠে আসায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তারা নিম্নমানের কাজকেই দায়ী করেছেন। দাবি জানিয়েছেন তদন্তের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের অধীনে সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার দুর্গাপুর উপজেলা সদরের নিকটবর্তী তিওরকুড়ি থেকে পাঁচুবাড়ি হয়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ সড়কটির নির্মাণ কাজ মাত্র কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে। সড়কটির কাজ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। গত ২৫ ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সড়কটির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ টাকা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি নির্মাণে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। মাটি লেভেল করে কোন ইটখোয়া, বালু বা কুচি পাথর ঠিকমতো না বিছিয়ে সরাসরি পিচ কার্পেটিং করা হয়েছে। এখন হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে আসছে ঢালাই কার্পেটিং। কার্পেটিং এর ক্ষেত্রে নামকা ওয়াস্তে পিচ ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। ছোট খাটো যানবাহন চলাচলেই দেবে বসে যাচ্ছে সড়ক। পুরো সড়কের কোথাও পিচ কার্পেটিং জমাট হয়নি।
এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, পা দিয়ে চাপ দিলেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ কেমন সড়ক। নতুন সড়কে কোনভাবেই এমনটা হওয়ার কথা নয়। নির্মাণ চলাকালীন আমরা প্রতিবাদ করলেও কোন কাজে আসেনি।
এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, সড়কে পরিমাণমতো উপকরণ ব্যবহার না করায় সড়কটির কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ট্রাক চলাচল করলেই সড়কটির কিছুই থাকবে না। ভারী বৃষ্টি হলেও সড়কের পিচ থাকবে না।
দেলুয়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবু বাক্কার বলেন, সড়কটির কার্যাদেশ মূল্য দুই কোটি ৬৫ লাখ হলেও খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এতো টাকা ব্যয় করে এমন দায়সারা কাজ আমরা মেনে নিতে পারছি না। সবই তো জনগণের টাকা।
তিওরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আনজুয়ারা বেগম বলেন, পিচ ঢালাইয়ের আগে মাটি ঠিকমত রোলিং করাও হয়নি। ধুলাবালির উপরেই কার্পেটিং করা হয়েছে। আমরা দেখেছি প্রতিবাদ করেছি কিন্তু ঠিকাদার কারও কথা শোনেনি। এলজিইডির লোকেরাও কেউ দেখতে আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন ঠিকাদার বলেন, হাত দিলে বা পা দিলে পিচ কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কারণ হলো কার্পেটিংয়ের সময় অ্যাসফল্ট ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। এই আঠালো সংমিশ্রণ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমাট বেঁধে যাওয়ার কথা। হয়তো অতি নিম্নমানের সব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাসফল্ট পরীক্ষা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। নিম্নমানের উপকরণের কারণে ঢালাই খসে বা উঠে যায়। সঠিক অনুপাতে পাথর বালু ও বিটুমিন না হওয়ার কারণও এটাই। এ কারণে সড়কটির কার্পেটিং উঠছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিনিধি ওয়াসিম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।
তবে এলজিইডির দুর্গাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুক ই মোহাম্মদের দাবি সড়কটি ভালভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ খারাপ হয়েছে বলে এলাকার মানুষের যে দাবি তা ঠিক নয়। যদিও এলজিইডি রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, সড়কটির পিচ কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। নির্মাণে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে নতুন করে সড়ক করে দিতে হবে ঠিকাদারকে।