তাসনিয়া ফারিণ। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিং, গান ও উপস্থাপনাতেও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বহুমাত্রিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন তিনি, ছুঁয়ে যাচ্ছেন দর্শকহৃদয়। এ অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন এমদাদুল হক মিলটন
শোবিজ অঙ্গনে বর্তমানে যে ক’জন মডেল ও অভিনেত্রী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তাসনিয়া ফারিণ তাদের অন্যতম। চলতি বছর যেন তাঁর ক্যারিয়ার এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠেছে। মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সব মাধ্যমে দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। ‘ফারিণ মানেই ভিন্ন কিছু’ এই ধারণাটিকে যেন এবার পূর্ণতা দিয়েছেন তিনি তাঁর বহুমাত্রিক উপস্থিতি দিয়ে। সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম, অ্যাওয়ার্ড শো উপস্থাপনা–সব জায়গায় যেন তাঁর সরব পদচারণা।
সম্প্রতি সঞ্জয় সমাদ্দারের পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ইনসাফ’ তাঁকে আবারও আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছে। গত কোরবানির ঈদে সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। এবার এটি মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। এতে ফারিণ অভিনয় করেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে। অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার এ কাজটিতে অভিনয় করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে তাঁকে।
সিনেমাটির ওটিটি যাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইনসাফ যেন বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়, অভিনেত্রী হিসেবে শুরু থেকেই এটিই ছিল চাওয়া। চরকিতে মুক্তি পাওয়ার পর এটি সবার হাতের মুঠোয় এসেছে। দেশ ও দেশের বাইরের দর্শকেরাও সিনেমাটি এখন দেখছেন–এটি সত্যিই আনন্দের। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর সিনেমাটির কথা যেমন মুখে মুখে ছড়িয়েছিল, ওটিটিতে মুক্তির পর এমনটি হচ্ছে।’
শুধু অভিনয় নয়, গানেও আগ্রহী তাসনিয়া ফারিণ। সংগীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা নতুন নয়। গত বছর ‘রঙে রঙে রঙিন হবো’ দিয়ে গানের অভিষেক হয় তাঁর। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে এ গানটি প্রচার হওয়ার পর সংগীতশিল্পী হিসেবে তাঁকে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দেয়। গানে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন তাহসান খান। গত বছরের শেষের দিকে ফারিণ ঘোষণা দিয়েছেন নতুন গান প্রকাশের কথা। কথা রাখলেন তিনি। চলতি বছর শেষের দিকে প্রকাশ হতে যাচ্ছে তাঁর নতুন গান। এতে তাঁর সহশিল্পী হিসেবে থাকছেন তারকা সংগীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল। এরই মধ্যে রাজধানীর একটি স্টুডিওতে এর রেকর্ডিং শেষ হয়েছে। ফারিণ জানান, গানটি নিয়ে তিনি দারুণ আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, গানটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে।
অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন, সেটি অনেকেই জানেন। সামাজিক মাধ্যমে তাঁর নানা সময়ের ছবিই বলে দেয় কাজের অবসর মিললেই বেরিয়ে পড়েন দূরে কোথাও। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে ভালোবাসেন তিনি। সম্প্রতি ভ্রমণ করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের মনোরম স্কাদার লেক-এ। মন্টেনেগ্রো ও আলবেনিয়া সীমান্তের এ লেক থেকে ভ্রমণের সেসব ছবি শেয়ার করেছেন ভক্তদের সঙ্গে। লাল শাড়ি পরে নৌকায় ঘুরতে দেখা যায় অভিনেত্রীকে।
দেশের ভেতরেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে টানে। শরতের কাশফুলের মায়ায় হারিয়ে যাওয়া কিংবা নদীর ধারে বসে নিরিবিলি সময় কাটানো–এসবই তাঁর প্রিয় অবসর বিনোদন। ফারিণ বলেন, ‘ইউরোপ বলতে আমরা শুধু ইতালি, ফ্রান্সকে বুঝি। আমি সবসময় আন্ডার রেটেড দেশগুলোতে যেতে পছন্দ করি। যেখানে বেশি পর্যটক আসেন না সেখানে আমার ঘুরতে ভালো লাগে। মন্টেনেগ্রো ও আলবেনিয়ায় ঘুরে বেশ প্রশান্তি পেয়েছি। সেখানের খাবার দাবারও ছিল দারুণ। সবকিছু মিলিয়ে বেশ সুন্দর অভিজ্ঞতা ছিল।’
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো উপস্থাপক হিসেবেও দর্শকের সামনে এসেছেন তিনি। একটি জাতীয় দৈনিকের আয়োজিত অ্যাওয়ার্ড শো উপস্থাপনা করে তিনি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ফারিণ জানান, অভিজ্ঞতাটি ছিল আনন্দঘন এবং ভিন্নধর্মী। তবে নিয়মিত উপস্থাপনা করার ইচ্ছে তাঁর নেই। যদি কোনো ইউনিক বা বিশেষ কিছু অফার আসে, তখন ভেবে দেখবেন তিনি।
অভিনয়, গান, ভ্রমণ ও উপস্থাপনা–সব মিলিয়ে বহুমাত্রিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন ফারিণ। সবকিছুর পরও তিনি অভিনয়কেই প্রাধান্য দিতে চান। একই সঙ্গে নিজের কণ্ঠের গান নিয়েও ভক্তদের মাঝে আলাদা জায়গা করে নিতে আগ্রহী তিনি। আজকাল অভিনয় কমিয়ে দিয়েছন ফারিণ।
কাজ বেছে করার কারণ জানাতে গিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘দর্শককে সবসময় ভিন্ন কিছু দিতে চাই। হাতে আসা সব কাজ গ্রহণ না করে মানসম্পন্ন প্রজেক্ট বেছে কাজ করছি। এটি সত্যি, আগের তুলনায় এখন কম কাজ করছি। কিছুটা কম অভিনয় করলেও মানসম্পন্ন প্রজেক্টের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’
ফারিণের ব্যক্তিত্বের বড় দিক হলো জীবনের প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কাজের ভিড়ে সময় পেলেই নিজেকে প্রকৃতির কাছে সঁপে দেন মিষ্টি হাসির মেয়েটি। তাঁর মতে, প্রকৃতি মানুষকে শুধু প্রশান্তিই দেয় না, বরং নতুনভাবে কাজ করার শক্তি জোগায়।
তাসনিয়া ফারিণ এখন একজন বহুমাত্রিক শিল্পী। অভিনয়, সংগীত, উপস্থাপনা–সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। সামনে আরও নতুন কিছু নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এই শিল্পী।