এবার সার আমদানিতে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়েছে এবং অযৌক্তিক মুনাফার সুযোগ বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আগে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতার পাশাপাশি দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতাকেও চুক্তি দেওয়া হতো। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা বাড়তি খরচ হতো, বৈদেশিক মুদ্রারও অপচয় হতো। এখন কেবল সর্বনিম্ন দরদাতাকে চুক্তি দেওয়ায় এ ধরনের অপচয় বন্ধ হয়েছে।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, সরকারের স্বচ্ছ ও কঠোর পদক্ষেপের ফলে আগের মতো সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির সুযোগ আর নেই। এ জন্য একটি মহল অনৈতিক মুনাফা করতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের নিয়মে টেন্ডারে একসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার কারণে টনপ্রতি ২০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বেশি দামে সার কিনতে হতো। এতে সরকারের বিপুল অর্থ অপচয় হতো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন কেবল সর্বনিম্ন দরে সম্মত প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি, ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি এবং ৯০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরে আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একই মূল্যে অতিরিক্ত ৯০ হাজার টন টিএসপি ও ১ লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, কার্যাদেশ যাচাই করলেই দেখা যাবে যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সারের জন্য সবার কাছে একই দরে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুটি সাপ্তাহিক বুলেটিন—আরগুস ও ফার্টিকন—এ প্রকাশিত দরের ভিত্তিতে সার আমদানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একই ধরনের সার একই দেশের ক্ষেত্রে কেবল এক দরে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন ভিন্ন দরে চুক্তি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য।
তবে মন্ত্রণালয় বলছে, জাহাজ ভাড়া, ডিসচার্জ খরচ ও স্থানীয় পরিবহন ব্যয়ের কারণে দেশভেদে দামের পার্থক্য থাকতে পারে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম, কোনো ধরনের অনিয়ম নয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির (জি-টু-জি) আওতাতেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) দীর্ঘদিন ধরে একই নিয়মে সার আমদানি করছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ ধারণ করে বর্তমান সরকার বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও তার অংশীদার হিসেবে যেকোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
গত এক বছরে কৃষি খাতে নানা সাফল্যের কথাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, শাকসবজি, আলু, পেঁয়াজ, ধান, আমসহ নানা ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।