আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামরিক কৌশল কিংবা মানবিক সহায়তা—এই তিনটি ক্ষেত্রেই একটি শব্দ বারবার উঠে আসে সেটা ফ্লোটিলা। শব্দটি শুনতে নতুন লাগলেও এর শিকড় বহু পুরনো এবং বহুমাত্রিক। বিশেষত সামরিক ও কূটনৈতিক পরিসরে ফ্লোটিলা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিভাষা।
‘ফ্লোটিলা’ শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ‘ফ্লোটা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘নৌবহর’। এটি মূলত ছোট আকারের নৌযান বা যুদ্ধজাহাজের একটি সংগঠিত বহরকে বোঝায় যা একসঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে সামরিক বাহিনী ছাড়িয়ে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোতেও।
একটি ফ্লোটিলা হতে পারে পুরোপুরি সামরিক—যেমন সাবমেরিন বা টর্পেডো বোট নিয়ে গঠিত নৌবাহিনীর ইউনিট। আবার, এটি হতে পারে একঝাঁক ত্রাণবাহী বেসামরিক জাহাজ, যারা কোনো অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য, ওষুধ বা অন্যান্য সহায়তা নিয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫০ সালের গাজা ফ্লোটিলা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। ইসরায়েলি অবরোধ অমান্য করে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ফিলিস্তিনে ত্রাণ পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। অভিযানে অংশ নেওয়া জাহাজগুলো একত্রে ‘ফ্লোটিলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
আধুনিক যুগে ‘ফ্লোটিলা’ কেবল সামরিক পরিভাষায় আটকে নেই। এটি হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং মানবিক সহানুভূতির প্রতীক। কখনও এটি প্রতিরোধের ভাষা, আবার কখনও বা শান্তির বার্তাবাহক।
তবে সামরিক কৌশলে ফ্লোটিলা এখনও একটি কার্যকর ইউনিট। বিশেষ করে যেসব অপারেশনে বড় যুদ্ধজাহাজ পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ বা অপ্রয়োজনীয়, সেখানে ছোট নৌযানগুলোর সমন্বিত ফ্লোটিলা দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এই ধারণাটি অপরিচিত নয়। উপকূলীয় নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সীমান্ত রক্ষা কিংবা উপকূলবর্তী অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলায় নৌবাহিনীর ছোট ছোট ইউনিটগুলোর মধ্যে ‘ফ্লোটিলা’ ধরনের সমন্বয় দেখা যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিভাষাটি আমাদের সামরিক পরিসরে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না, তবুও এর কার্যকারিতা ব্যাপক।









