বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেছেন, এই মাসে ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্গত ওয়ার্ড এবং থানাগুলোতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে আমরা একাধিক মানববন্ধন করেছি। কিন্তু তাতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, আমরা সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে লড়াই শুরু করেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেটি অব্যাহত রেখেছেন। এখন দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন—সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান নগর ভবনের সামনে নাগরিক সমস্যা সমাধানে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার অসীম বলেন, ঢাকার হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান এবং ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের নাগরিক সুবিধা অর্জনের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে। জনগণ সরকারকে ট্যাক্স দেয়, কিন্তু তার বিনিময়ে সুখ-দুঃখের সুবিধা পায় না। এ কারণেই আমরা বিগত দিনে চারটি মানববন্ধন করেছি।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩ অক্টোবর আমরা শেষ মানববন্ধন করেছি। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশাসককে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন— ‘পরে জানাব’। দুই-তিন দিন পর অবশেষে যোগাযোগ সম্ভব হলে আমরা জানাই যে, মানববন্ধন শেষে আমরা স্মারকলিপি দিতে চাই। তখন প্রশাসক বলেন—‘আপনারা মানববন্ধন করলে তো সেটা সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে যায়!’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনগণ ট্যাক্স দিবে, কিন্তু সুবিধা পাবে না—এই কথাটা বলা যাবে না, নাকি? প্রশাসকরা বলেন, মানববন্ধন করলে সেটা সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে যায়! ওনারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মচারীর কাছ থেকে এমন কথা আশা করা যায় না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিভিন্ন পৌরসভা ও করপোরেশনে অনির্বাচিত এবং সিলেক্টেড প্রশাসক আছেন, যারা সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন, তাই জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করেন, তাদের দাবি-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন।
তিনি বলেন, প্রশাসক বলেছেন- তাদের জনগণের কাছে কোনো কমিটমেন্ট নেই। আমি বলব, এরা রাষ্ট্রের আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। জনগণ যেমন ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে, তেমনি এই ধরনের রাষ্ট্রের আবর্জনাকেও ঝাড়ু দিয়ে বিদায় করার সময় এসেছে।
ব্যারিস্টার অসীম আরও বলেন, জনগণের পালস আপনারা বোঝেন না। জনগণের অধিকারগুলো দিতে পারেন না, উল্টো বলেন মানববন্ধন করলে সেটা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যায়! এটা কেমন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীসুলভ আচরণ? আমরা আশা করব, আপনারা আচরণ পরিবর্তন করুন, সংযত হোন, জনগণের জন্য কাজ করুন।
গণতন্ত্রের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাক। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত সাধারণ নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন এবং দল নিরপেক্ষ অংশীদারদের নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটি পর্যায়ে—ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরে—একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। আমরা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, আমরা গণতন্ত্রের পথে নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই।
মানববন্ধন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় বিএনপি নেতারা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন—কলাবাগান থানা বিএনপির আহ্বায়ক খালেক কিবরিয়া লাকি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, হাজারীবাগ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. রেজা ফয়সাল, নিউমার্কেট থানা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন এস এম মতিউর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন টিপুসহ ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্গত থানা ও ওয়ার্ড অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।