একজন মার্কিন বিজ্ঞানী এমন এক বিশেষ ধরণের কাঠ উদ্ভাবন করেছেন, যা স্টিলের চেয়ে দশ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং ছয় গুণ হালকা। এই নতুন উপাদানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে খবর দিয়েছে সিএনএন।
আমেরিকান গণমাধ্যম জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য এই উদ্ভাবনী কাঠ তৈরি করেছে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিয়াংবিং হু, যিনি প্রায় এক দশক ধরে নির্মাণশিল্পে ব্যবহারের উপযোগী উপকরণ নিয়ে গবেষণা করছেন।

অধ্যাপক হু জানান, তার লক্ষ্য ছিল কাঠকে আরও শক্তিশালী করতে সেলুলোজ ব্যবহার করা। ২০১৭ সালে তিনি প্রথম সফলভাবে সাধারণ কাঠকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টেকসই নির্মাণ উপকরণে রূপান্তর করতে সক্ষম হন।
তিনি প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে বলেন, কাঠ প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়, এরপর রাসায়নিক দ্রবণে সেদ্ধ করা হয় এবং পরে তা উচ্চচাপে চেপে ধরা হয়। প্রায় এক সপ্তাহের এই প্রক্রিয়া শেষে তৈরি হয় এমন এক উপাদান, যা ওজন ও দৃঢ়তার দিক থেকে স্টিলকেও ছাড়িয়ে যায়।
দেখতে এটি সাধারণ কাঠের মতো হলেও ‘সুপারউড’ কার্যক্ষমতার দিক থেকে প্রচলিত কাঠের তুলনায় অনেক বেশি টেকসই এবং শক্তিশালী। ফলে এটি ভবিষ্যতে নির্মাণশিল্পে ধাতুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ ও স্কুল অব বিল্ট এনভায়রনমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ফিলিপ ওল্ডফিল্ড, যিনি ইনভেন্টউড প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নন, তিনি বলেন—নির্মাণ উপকরণ হিসেবে কাঠের পরিবেশগত সুবিধা স্টিল বা কংক্রিটের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ কাঠ উৎপাদনের প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম জ্বালানিনির্ভর, এবং এটি সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের কাঠামোয় কার্বন ডাই–অক্সাইড সঞ্চয় করে রাখে।
তিনি বলেন, ‘কাঠজাত পণ্যগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি কার্বন সংরক্ষণের উপায় হিসেবে দেখা যেতে পারে। কাঠ দিয়ে ভবন নির্মাণ করলে শহরগুলো আসলে ভবনগুলোর ভেতরেই দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্বন নিঃসরণ ‘‘বন্দি’’ করে রাখতে পারবে।’
তবে ওল্ডফিল্ডের মতে, বর্তমান প্রকৌশল কাঠ বা ‘ইঞ্জিনিয়ার্ড টিম্বার’ পণ্যগুলো ইতোমধ্যেই স্টিল ও কংক্রিটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘কাঠের ব্যবহার বাড়ানোর পথে প্রধান বাধা কাঠের শক্তি নয়, বরং নির্মাণশিল্পের ঝুঁকিভীতি এবং পরিবর্তনের প্রতি ধীর মনোভাব।’
তিনি আরও বলেন, ভবন নির্মাণে কাঠের ব্যবহার বাড়াতে হলে ভালো প্রশিক্ষণ, পাইলট প্রকল্প এবং উন্নত নীতিমালা কাঠামো প্রয়োজন।
তার ভাষায়, ‘সুপারউডের মতো আরও শক্তিশালী কাঠ পণ্য স্থপতিদের বৃহত্তর স্থানজুড়ে কাঠের কাঠামো তৈরি এবং টেকসই সমাপ্তি আনতে সহায়তা করতে পারে, যা নিঃসন্দেহে কাঠ ব্যবহারের প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’