খাদ্যনালী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে খাবার গিলতে অসুবিধা এমনকি গুরুতর অবস্থায় হতে পারে শ্বাসকষ্টও। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।
খাদ্যনালী কী?
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, খাদ্যনালী হলো পরিপাকতন্ত্রের সবচেয়ে উপরের অংশ। খাদ্যনালী গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, যা টিউব বা নলের মতো এবং প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। খাদ্যনালীর প্রধান কাজ হচ্ছে খাবার ও তরল মুখ থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।
খাদ্যনালী শুকিয়ে যায় কেনো?
মুখ থেকে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেওয়ার নলটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, সংকুচিত বা সরু হয়ে যায়—তখন এটিকে খাদ্যনালীর স্ট্রিকচার বা ন্যারোয়িং বলা হয়। বিভিন্ন কারণে খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমন:
১. ইসোফেগাস বা খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইসোফেগাসে টিউমার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যনালীতে ক্যানসার টিউমার হয়ে থাকে। ক্যানসার নয় এমন টিউমার হওয়ার কারণেও খাদ্যনালী শুকিয়ে যেতে পারে।
২. খাদ্যনালী একটি টিউবের মতো। এটি কাজ করে নানা রকম মুভমেন্টের মাধ্যমে। এই মুভমেন্টগুলো যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে খাবার খাদ্যনালী থেকে পাকস্থলীতে যেতে পারে না। যার কারণে খাদ্যনালীতে খাবার আটকে যায়।
৩. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের কারণে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে চলে আসে। পাকস্থলীর অ্যাসিড বারবার খাদ্যনালীতে উঠে আসার কারণে ইনজুরি হয়, খাদ্যনালীতে প্রদাহ হতে পারে এবং খাদ্যনালী শুকিয়ে যেতে পারে।
৪. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের কারণে খাদ্যনালী শুকিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া হারপিক, ক্ষার, অ্যাসিড জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে খাদ্যনালী বার্ন হয়ে শুকিয়ে যেতে পারে।
৫. অ্যালকোহল ও ধূমপানের কারণেও খাদ্যনালী শুকিয়ে যেতে পারে।
লক্ষণ ও জটিলতা
১. খাদ্যনালী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে খাবার গিলতে অসুবিধা হয়, গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
২. প্রথম দিকে শক্ত খাবার গলায় আটকে যায় এবং ধীরে ধীরে তরল খাবারও গলায় আটকে যাওয়ার অনুভূতি হয়।
৩. বারবার পানি খেতে হয় খাবার গলা দিয়ে নামানোর জন্য।
৪. বুকে ব্যথা হয়, ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।
৫. খাবার খাদ্যনালী দিয়ে নিচে নামতে না পারার কারণে উপরের দিকে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, বমি হয়।
৬. শ্বাসনালীতে খাবার চলে যেতে পারে। এর ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৭. ক্ষুধামন্দা ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, ওজন কমে যেতে পারে।
৮. ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে, দাঁত নষ্ট হয়ে যাওয়া, মুখে ঘা হতে পারে।
৯. ক্যানসার টিউমারের কারণে যদি খাদ্যনালী শুকিয়ে যায়, তাহলে ক্যানসার লিভার, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, খাদ্যনালী শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণগুলো কী, তার ওপরই মূলত নির্ভর করে রোগীর চিকিৎসা। প্রথমে রোগের লক্ষণ এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের কারণ শনাক্ত করা হয়।
খাদ্যনালীতে টিউমার বা ক্যানসার হয়ে যাওয়ার কারণে যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, অ্যান্ডোস্কোপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে।
খাদ্যনালী টিউবের মুভমেন্টে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে বিভিন্ন ওষুধ এবং প্রয়োজনে অ্যান্ডোস্কোপি ভিত্তিক থেরাপি দেওয়া হয় রোগীকে। অ্যাসিড জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে ইসোফেগাস ন্যারোয়িং হলে ডাইলেটারের মাধ্যমে খাদ্যনালী মোটা করে দেওয়া হয়।
যদি কারো খাবার গিলতে ও ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, বমির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল বন্ধ করতে হবে, অ্যাসিড রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মাধ্যমে খাদ্যনালী শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
								
								
															
								







