এলসির দায় পরিশোধ বিষয়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কখনও খেলাপি হয়নি; আগামীতেও এলসির দায় শোধে সমস্যা হবে না।
এলসি নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কাটাতে গতকাল মঙ্গলবার বিশেষ সভা করেন গভর্নর। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘মিট দ্য গভর্নর’ নামে এ সভার আয়োজন করে। ভার্চুয়াল এ সভায় ১২২ জন অংশ নেন। সেখানে গভর্নর ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
জানা গেছে, আকস্মিক সরকার পরিবর্তনের পর এলসিতে কনফারমেশন দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিল কোনো কোনো বিদেশি ব্যাংক। অবশ্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, মাশরেক, সিটি এনএর মতো ব্যাংকের কনফারমেশনে কোনো সমস্যা নেই। তবে দুবাইভিত্তিক কিছু ব্যাংক এলসির বিপরীতে কনফারমেশন দেওয়া স্থগিত রাখে। তাদের নিশ্চয়তার বিপরীতে খোলা এলসিতে সময়মতো অর্থ পাবে কিনা– এসব নিয়ে দ্বিধার কারণে ওই অনিশ্চয়তা। বিদেশি অন্য কোনো কোনো ব্যাংকও ধীর চলো নীতির মধ্যে ছিল। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে, অনেক ব্যাংক এসব ব্যাংকের এলসি নিতে চাচ্ছিল না। এ রকম অবস্থায় সামগ্রিকভাবে গভর্নর সব পক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন– পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এরই মধ্যে বকেয়ার ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারও দ্রুত পরিশোধের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে এ অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে।
বিশেষ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাত সংস্কারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। আশার বিষয় হলো, পর্ষদ পুনর্গঠনের পর বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চলতি হিসাব ইতিবাচক হয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে, তা কাটাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান। মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। সবচেয়ে আশার বিষয় হলো, প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করেছে। অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসছে। এরই মধ্যে রিজার্ভের উন্নতি হতে শুরু করেছে।
যেসব বকেয়া রয়েছে তা-ও দ্রুত পরিশোধ করা হবে বলে জানান গভর্নর। বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত সভার শুরুতে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের ফলে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। ডলার বাজার স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। ফলে পরিশোধ সক্ষমতা আরও বেড়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট লাইন, অ্যাড কনফারমেশন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তিনটি পর্যায় থেকে দেখা হয়। যে কোনো পট পরিবর্তনের পর সবাই একটু সতর্কতা দেখায়। কোনো ঝুঁকি আছে কিনা, তারা তা দেখতে চায়। এবার যেহেতু আকস্মিক সরকার পতন ঘটেছে, অনেকের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা ছিল। বিশেষ করে দুবাইভিত্তিক কোনো কোনো ব্যাংক বাড়তি সতর্কতা দেখাচ্ছিল। এসব কারণে বিদেশি করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকের তিনটি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়েই এ সভা হয়েছে। সেখানে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। এখন তারা আশ্বস্ত।