বর্তমান সময়ে অনেকেই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে অন্যতম খাদ্যনালির ক্যান্সার বা ইসোফেগাল ক্যানসার। এই ক্যানসারের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন খাদ্যনালির ক্যানস্যারে। বিবিসির প্রতিবেদনে এই রোগের বিভিন্ন বিষয় বিস্তারি উঠে এসেছে।
খাদ্যনালি হল মানুষের মুখ থেকে পাকস্থলীর সঙ্গে সংযোগকৃত ফাঁকা নল। এর মূল কাজ মুখ গহ্বরে থাকা খাবার পাকস্থলী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। এটি খাদ্যনালির অভ্যন্তরে প্রদাহ বা টিউমার থেকে ক্যান্সার হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২০ সালের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে ২১ হাজার ৭৪৫ জনের মধ্যে খাদ্যনালির ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এই ক্যান্সারে মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি- প্রায় ১৪% এর মতো। তাই খাদ্যনালির ক্যানসারে নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। এই ক্যানসারে ভুগলেও সহজে বুঝতে পারা যায় না। তাই এই ক্যানস্যারের লক্ষণগুলো জানতে হবে।
লক্ষণ: খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কিছু উপসর্গ রয়েছে, তবে সেগুলো বেশ সাধারণ হওয়ায় অনেকের পক্ষেই বোঝা কঠিন যে এর কারণ ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক সামিউল ইসলাম এবং ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
- ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে অনেকখানি ওজন কমে গেলে, খাবারে অরুচি
- বমি বমি ভাব, ক্লান্তিবোধ, দুর্বলতা। খাওয়ার সময় দম বন্ধ হয়ে আসা
- প্রাথমিক অবস্থায় শক্ত খাবার গিলতে অসুবিধা হবে। পরবর্তীতে তরল খাবার খেতে এমনকি ঢোক গিলতেও কষ্ট হতে পারে
- হজমে সমস্যা যেমন: বুক জ্বালাপোড়া, বার বার ঢেকুর তোলা, মুখে টক পানি আসা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি বার বার দেখা দিতে পারে।
- এসব সমস্যার স্বাভাবিক চিকিৎসা নেয়ার দুই সপ্তাহ পরেও রোগ ভালো না হলে
- রাতের বেলা শ্বাসকষ্ট। গলা ও বুকের মাঝখানে ব্যথা, বিশেষ করে গিলতে গেলে
- দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ায় ভোগা
- দীর্ঘদিন ধরে কাশি
- এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এসব লক্ষণ থাকার অর্থ এই নয় যে কেউ খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত। এগুলো সাধারণ উপসর্গও হতে পারে।
খাদ্যনালির ক্যান্সার কারণ: খাদ্যনালির ক্যান্সারের পেছনে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার বড় ধরনের সংযোগ আছে বলছেন চিকিৎসকরা। ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, যে কেউ খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এর কারণ সবসময় পরিষ্কারভাবে বলা যায় না। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে প্রধান কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন তারা।
- অতিরিক্ত ফাস্টফুড, আধা-সেদ্ধ খাবার, পোড়া তেলে ভাজা খাবার খেলে
- পান, জর্দা, গুল, সিগারেট, বিড়ি এবং অতিরিক্ত মদপান করলে
- কৃত্রিম রং ও প্রিজারভেটিভযুক্ত ভেজাল খাবার খাওয়া
- সব ঋতুতে সব সময় গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে
- সাধারণত ৪০ বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে এই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ৭৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি কমে যায়।