হাতের আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট মানুষের দেহের একটি অন্যতম অনন্য বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ একে অপরের থেকে আলাদা। এমনকি যমজদেরও আঙুলের ছাপ এক রকম হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, আঙুলের ছাপ কেন আলাদা হয়? এর পেছনে রয়েছে কিছু প্রাকৃতিক ও জেনেটিক কারণ।
তার আগে দেখে নেওয়া যাক, আঙুলের ছাপটা আসলে কী? হাতের আঙুলের ছাপ মূলত ত্বকের ওপরের অংশের নকশা বা প্যাটার্ন। এই নকশা ত্বকের ছোট ছোট ভাঁজ এবং উঁচু-নিচু অংশ দিয়ে গঠিত। আঙুলের ত্বকের এই ভাঁজগুলোর গঠন হয় গর্ভাবস্থায় যখন আমরা মায়ের পেটে থাকি। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ছাপ অপরিবর্তিত থাকে।
গর্ভাবস্থায়, শিশু মাত্র ৬ থেকে ১৩ সপ্তাহের মধ্যে তার ত্বকের নিচের স্তরগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে ত্বকের ভেতরে ভাঁজ এবং রেখা গঠন শুরু হয়। এগুলোই পরে আঙুলের ছাপ হিসেবে প্রকাশ পায়। আঙুলের ছাপের ভিন্নতার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো জেনেটিক প্রভাব। আমাদের দেহের বৈশিষ্ট্যগুলো মূলত জিন বা জেনেটিক কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতিটি মানুষের জিন আলাদা। তাই প্রত্যেকের শরীরের গঠন এবং বৈশিষ্ট্যও আলাদা হয়। তেমনি আঙুলের ছাপের ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে শুধু জিনই এই ভিন্নতার কারণ নয়। গর্ভাবস্থার পরিবেশ ছাপের পার্থক্যের অন্যতম কারণ। গর্ভে থাকাকালীন শিশুর আঙুলের ছাপের গঠন প্রক্রিয়ায় পরিবেশের প্রভাবও বড় ভূমিকা রাখে। শিশুর অবস্থান, গর্ভে তরল (অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড)-এর চাপ, পুষ্টি এবং অন্যান্য বাহ্যিক প্রভাব আঙুলের ছাপের নকশা আলাদা করে তুলতে পারে। এ জন্য এমনকি যমজ শিশুরাও একই রকম আঙুলের ছাপ পায় না, কারণ তাদের গর্ভাবস্থায় প্রাপ্ত পরিবেশের চাপ এক রকম নয়।
মানুষের হাতের ত্বকের ওপরের স্তরকে বলে এপিডারমিস। এপিডারমিস দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে এপিডারমিসের নিচে থাকা ডার্মিস স্তরের বৃদ্ধি হয় ভিন্নভাবে। বৃদ্ধি পাওয়ার এই ভিন্নতার কারণে আঙুলের ত্বকে ছোট ছোট ভাঁজ তৈরি হয়। সেটাই আঙুলের ছাপের নকশা গঠন করে। এই ভাঁজগুলোর বৃদ্ধি এবং ত্বকের গভীর স্তরের চাপের পার্থক্যের কারণে কারো ছাপ কারো সঙ্গে মেলে না।