সর্বশেষ
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের শক্ত প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা
যে ৫ প্রাণঘাতী রোগের কারণ হাই কোলেস্টেরল
এক লুকের সঙ্গে আরেক লুকের কোনো মিল নেই টালিউড সুইটহার্ট শ্রীজলার
হজম ক্ষমতা বাড়াতে মেনে চলুন কিছু টিপস
গ্রীষ্মে রোদে পোড়া ও নিস্তেজ ত্বককে বিদায় জানাতে মেনে চলুন এই ৭টি হাইড্রেশন হ্যাকস
হাই ট্রাইগ্লিসারাইড : স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
খালি পেটে পেঁপে পাতার রস খেলে মিলবে যেসব উপকার
৮৬ বছর বয়সে উইন্ডসার্ফিংয়ে বিশ্বরেকর্ড
সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মালিক হলেই কোরবানি ওয়াজিব
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত

সেন্ট বাটনে ক্লিক করার পর ই-মেইল কতটা পথ ভ্রমণ করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়

অনলাইন ডেস্ক

ধরা যাক, বন্ধুকে তোমার কম্পিউটার থেকে ই-মেইল পাঠালে। বন্ধুটি ঠিক তোমার পাশেই আছে। ঠিকানা ঠিক থাকলে তুমি পাঠানোর কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যে ই-মেইলটি পেয়ে যাবে সে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, তুমি পাঠানোর পর এই কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই ই-মেইলটা হয়তো ঘুরে আসে পুরো দুনিয়া। এসো দেখি, ই–মেইল পাঠানোর পর কী কী ঘটনা ঘটছে।

যে মুহূর্তে তুমি সেন্ট বাটনে চাপ দাও, তখন ই–মেইলটি ডিজিটাল খামে মুড়িয়ে তরঙ্গ আকারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তোমার রাউটারে। ডিজিটাল খামে মুড়িয়ে পাঠানোর কাজটি করে তোমার যন্ত্র, ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি। খাম বলতে আসলে বিশেষ ধরনের কোড বোঝাচ্ছি। যেই কোডে লেখা থাকে, তোমার ই–মেইলের বিষয়বস্তু কী, কোন ঠিকানায় যাচ্ছে, কী লেখা যাচ্ছে এসব। এখানে নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে বলে দেওয়া হয়, প্রাপক, মানে যাকে পাঠাচ্ছ, সে ছাড়া যেন ই–মেইলটি কেউ পড়তে না পারে। অর্থাৎ তুমি যে ই–মেইলটি লিখেছ, সেটাকে বিশেষ কোডে রূপান্তরিত করে রাউটারকে পাঠায় ডিভাইস। রাউটার এবার তোমার ই–মেইল প্রোভাইডার অনুযায়ী, (জিমেইল, আউটলুক কিংবা ইয়াহু মেইল হলো ই–মেইল প্রোভাইডারের উদাহরণ), ই–মেইলটাকে পাঠিয়ে দেবে কাছের কোনো এক এসএমটিপি (SMTP—Simple Mail Transfer Protocol) সার্ভারে। একে অনেকটা প্রেরকের পোস্ট অফিসের সঙ্গে তুলনা করতে পারো।

মূলত এটি একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটারে লেখা প্রোগ্রাম, যার কাজ হলো তোমার পাঠানো ই–মেইলে প্রাপক আর প্রেরকের ই–মেইল একই কোম্পানির কি না। যদি একই কোম্পানির হয়, তাহলে সেই প্রাপকের কাছাকাছি থাকা একটি আইএমএপি বা পিওপি৩ (IMAP—Internet Message Access Protocol or POP3—Post Office Protocol 3) সার্ভারে পাঠিয়ে দেবে। এটিও আরেকটি বিশেষ ধরনের সার্ভার। প্রাপকের পোস্ট অফিস হিসেবে চিন্তা করতে পারো। এর কাজ হলো, যে ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে, সেটা আদৌও সঠিক কি না। যদি সঠিক হয়, তাহলে এটি প্রাপকের ডিভাইসে পাঠিয়ে দেয়। প্রাপকের ডিভাইস তখন ডিজিটাল খামে মোড়ানো ই–মেইলটি তুমি যেভাবে পাঠিয়েছিলে, সেভাবেই টেক্সট ফরম্যাট ঠিক করে তোমার বন্ধুর ডিভাইসে দেখায়।

যাহোক, প্রেরক ও প্রাপকের (এখানে তুমি প্রেরক ও তোমার বন্ধু হলো প্রাপক) ই–মেইল প্রোভাইডার কোম্পানি যদি ভিন্ন হয়, তাহলে তোমার এসএমটিপি সার্ভার তোমার বন্ধুর ব্যবহার করা ই–মেইল প্রোভাইডার কোম্পানির এসএমটিপি সার্ভারে পাঠাবে। এরপর ওই এসএমটিপি সার্ভার মেইলটা পাঠিয়ে দেবে প্রাপকের কাছাকাছি থাকা কোনো একটি আইএমএপি বা পিওপি৩ সার্ভারে। সেখানে দেখা হবে, প্রাপকের ঠিকানা সত্য কি না। সত্য হলে পাঠিয়ে দেবে প্রাপকের ডিভাইসে।

মজার বিষয় হলো, এই সার্ভার কম্পিউটারগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। যেসব স্থাপনায় এ ধরনের সার্ভার থাকে, সেটাকে বলা হয় ডেটা সেন্টার। এশিয়ায় গুগলের ডেটা সেন্টার আছে সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও জাপানে। তুমি জিমেইলের মাধ্যমে তোমার বন্ধুর জিমেইল ঠিকানায় মেইল পাঠালে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা সেটি আমাদের কাছের ডেটা সেন্টার সিঙ্গাপুরে যাবে। ঢাকা শহর থেকে সিঙ্গাপুরের গুগলের ডেটা সেন্টার স্থলপথের দূরুত্ব প্রায় ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার! সেখান থেকে আবার পুরো পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে আসবে বন্ধুর ডিভাইসে। যেহেতু তুমি আর তোমার বন্ধু পাশাপাশি বসে আছ, তাই ফিরে আসার কথা বলছি। কিন্তু তোমার বন্ধুর ই–মেইলটি যদি আউটলুক কিংবা ইয়াহুতে থাকে, তাহলে সিঙ্গাপুর থেকে তোমার ই–মেইলটা চলে যাবে কাছাকাছি থাকা আউটলুক বা ইয়াহুর এসএমটিপি সার্ভারে। সেই সার্ভার থাকতে পারে একই দেশে কিংবা ভিন্ন দেশে। সেখান থেকে ই–মেইলটা আবার ফিরে আসবে তোমার বন্ধুর ডিভাইসে।

বাংলাদেশ থেকে জিমেইলের মাধ্যমে ই–মেইল পাঠালে যে শুধু সিঙ্গাপুরেই যাবে, বিষয়টি এমন নয়। কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে কোনো কারণে সিঙ্গাপুরের সার্ভারে অনেক বেশি চাপ থাকলে মেইলটা অন্য কোনো সার্ভারে যেতে পারে। এ ছাড়া ভিপিএন বা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেও ই–মেইলটা ভিন্ন কোনো সার্ভারে যেতে পারে। সেটা হতে পারে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সার্ভারে। যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের অনেকগুলো সার্ভার আছে বিভিন্ন রাজ্যে। আমরা যদি ধরি সাউথ ক্যারোলাইনা রাজ্যের ডেটা সেন্টারে থাকা সার্ভারে আমাদের ই–মেইলটা যাবে, তাহলে ই–মেলটিকে পাড়ি দিতে হবে হবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ। এটা শুধু যাওয়ার পথের হিসাব। ফেরার পথ যোগ করলে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

সেখান থেকে তোমার বন্ধুর কাছাকাছি থাকা আইএমএপি বা পিওপি৩ সার্ভারে আসবে। তারপর ই–মেইলটি চলে আসবে তোমার বন্ধুর ডিভাইসে। এই ঘোরাঘুরির নির্দিষ্ট কোনো পথ বা সীমারেখা নেই। একই ই–মেইল প্রোভাইডার হলে একটু কম পথ অতিক্রম করতে হয়, কিন্তু ভিন্ন প্রোভাইডার হলে পুরো পৃথিবীও চক্কর দিয়ে আসতে পারে ই–মেইলটি।

আর এসব কাজ ঘটছে কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই! মিলিসেকেন্ড হলো এক সেকেন্ডের এক হাজার ভাগের একভাগ। প্রশ্ন করতে পারো, এত দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই–মেইল কীভাবে এত পথ ঘোরাফেরা করে? এর উত্তরে বলতে হবে, ই–মেইল বা যেকোনো ডিজিটাল ডেটাই প্রায় পুরো পথ পাড়ি দেয় তড়িৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গ কিংবা আলো হিসেবে। আর আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সে হিসাবে সেকেন্ডে আলো পৃথিবীকে প্রায় সাড়ে সাতবার চক্কর দিতে পারে! সুতরাং বুঝতেই পারছ, পাশে বসা বন্ধুকে পাঠানো মেইলটা সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে পৌছালেও তোমার অজান্তে সেটি হয়তো ঘুরে এসেছে পুরো পৃথিবী।

সূত্র: হাউস্টাফওয়ার্কস, উইকিপিডিয়া, গুগল

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ